বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভালোবাসার কাঙাল ওরা ২১ জন

  •    
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৮:৫৪

সারা বিশ্বে তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে দিনটি উদ্‌যাপন করা হবে। শুধু তরুণ-তরুণী নয়, নানা বয়সের মানুষ প্রিয়জনদের বাহারি ফুল ও উপহার দিয়ে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করবেন। এদিনও এই বৃদ্ধাশ্রমের ২১ মায়ের সঙ্গে দেখা করতে হয়তো কেউ আসবে না। তবু তারা প্রতীক্ষা করেন।

ওরা একুশ জন, বিধবা। প্রত্যেকের আছে সন্তান। আর সেই সন্তানদের কাছে তারা কি না হয়ে উঠেছিলেন ‘বোঝা’। এ জন্য পরিবারে ঠাঁই মেলেনি। আশ্রয় জুটেছে একটা বৃদ্ধাশ্রমে। সেখানেও তারা কাঙালের মতো সন্তানদের পথ চেয়ে থাকেন। যদি কেউ এসে হঠাৎ মা বলে ডাক দেয়।

তারা এখন আছেন রংপুরের পীরগাছা চৌধুরাণী এলাকায় ‘দেবী চৌধুরাণী বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে’। প্রবীণদের প্রতি ভালোবাসা থেকে রাজেকা রহমান নামে এক নারী ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১৫ সালের শুরুতে গড়ে তোলেন এই কেন্দ্র।

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সারা বিশ্বে তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে দিনটি উদ্‌যাপন করা হবে। শুধু তরুণ-তরুণী নয়, নানা বয়সের মানুষ প্রিয়জনদের বাহারি ফুল ও উপহার দিয়ে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করবেন।

এদিনও এই বৃদ্ধাশ্রমের ২১ মায়ের সঙ্গে দেখা করতে হয়তো কেউ আসবে না। তবু তারা প্রতীক্ষা করেন।

শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কেউ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কেউ গালে হাত দিয়ে বসে আছেন। কেউবা পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করছেন। অতীতের সুখের দিনের কথা বলতে বলতে কারও দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে নামছে।

একটি কক্ষে গিয়ে কথা হয় সত্তরোর্ধ্ব নূর জাহান খাতুনের সঙ্গে। তিনি বিছানায় বসে নিজের জন্য পান-সুপারি তৈরি করছেন। পাশের বিছানায় বসে আছেন জমিলা বেগম। তারা থাকেন একই কক্ষে।

নূর জাহান বেগম বলেন, ‘স্বামী মরি গেইছে ৪২ বৎসর হইল। দুই ছেলের মধ্যে একজন ব্যবসা করে। আরেকজন জমিত কাজ করে। তিন বেটিক বিয়েও দিচোং। ছৈল পোইল সবার বিয়ে দচোং। ছৈলের বিয়ের পর থাকি মোর জীবনটা শ্যাষ। দেড় বছর হইল এটি আচ্চি।’

তিনি বলেন, ‘ছেলের কাছে গেছিনুং, ছেলের বউ দেকপের পায় না, বউ খালি ঝগড়া করে। বউ বলে ত্ইু এলা আচ্চিস ক্যা? ত্ইু তোর বোন-মেয়ের কাছে যা...। এইলা নিয়ে কাজিয়ে ঝগড়া করি আমি চলি আচ্চি। ছৈলেডারে দেকপের মন চায়।’

জমিলা বেগম বলেন, ‘বহুদিন ধরি অসুখ। বেটা হামার একটা। ব্যাটা ট্যাকা দিবের চায়, বউ ট্যাকা দিবের দেয় না, হামার বউ ভালা নোয়ায়। বেটা তো ফেলবার চায় না, বউয়ের জন্য পায় না। বউ ঝগড়া করে আর কয় তোমরা বেটির বাড়িত যাও, ওমরা পালবে, পরে এটে আচ্চি। ঝগড়া ক্যাচাল ভালা নাগে না।’

রহিমা বেগম নামের আরেকজন বলেন, ‘থাইকপের জাগা নাই, খাওয়ায় কেডা। মেয়ের বাড়িত গেছিনুং মেয়ে দেকপের পায় না। ভিক্ষে করি খাবার কয়। তারপর ভিক্ষে করার বদল এটে আইলচোং এক বছর হইল। কেউ দেকবার আহে না।’

বৃদ্ধাশ্রমের উদ্যোক্তা রেজেকা রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার কেন জানি বয়স্ক লোকদের প্রতি খুব দুর্বলতা। সেই দুর্বলতা থেকেই আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি। বয়স্করা তো কাজ করতে পারেন না। তারা এখন পরিবারের কাছে অবহেলার পাত্র। তাই আমি তাদের এখানে নিয়ে আসি। এদের তো সবাই থেকেও কেউ নাই। তাই আমি তাদের সেবা দিই। মায়ের মতো শ্রদ্ধা করি।’

তিনি বলেন, ‘আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি, তখন থেকেই আমার সঞ্চয় ছিল। ২০ শতক জমি ২০ লাখ টাকা দিয়ে কিনি। আমার স্বর্ণালংকার বিক্রি করে এই জমি বৃদ্ধাশ্রমের নামে দিয়ে দিই। আমার ভালো লাগা থেকেই আমি এদের সেবা করি। আমার মৃত্যুর পরও যেন বৃদ্ধাশ্রমটা চালু থাকে, সে ব্যবস্থা করে যেতে চাই।’

এ বিভাগের আরো খবর