বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কুঞ্জবনে এখন শুধুই পরিযায়ী পাখি

  •    
  • ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৯:০৪

প্রায় ১২ বছর থেকে নওগাঁর মহাদেবপুরের আত্রাই নদীর কুঞ্জবন এলাকাজুড়ে অতিথি পাখি আসছে শীত মৌসুমে। শীতপ্রধান দেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পরিযায়ী পাখিরা এসে কুঞ্জবনের নদীতে আশ্রয় নেয়। শীতের শুরুতে আসতে থাকে পাখি। নদীতে বছরের ৪-৫ মাস পাখিগুলো থাকে।

সবুজে ঘেরা গ্রাম কুঞ্জবন। গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। নদীর দুপারের সড়ক আর সড়কের পাশে অসংখ্য গাছে ছেয়ে থাকা সেই কুঞ্জবন গ্রাম পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে হয়ে উঠেছে মুখর।

শীতের শুরু থেকেই হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি এসে আবাস গড়েছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীর তীরের সেই গ্রাম কুঞ্জবনে।

পরিযায়ী সেসব পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে নদীর দুপারের মানুষের। নিরাপদে পাখিগুলোর বসবাসের জন্য নিরাপদ আবাস করে দিতে প্রচেষ্টার কমতি রাখেনি সেখানকার সামাজিক সংগঠনগুলো।

স্থানীয় লোকজন ও সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১২ বছর থেকে নওগাঁর মহাদেবপুরের আত্রাই নদীর কুঞ্জবন এলাকাজুড়ে অতিথি পাখি আসছে শীত মৌসুমে। শীতপ্রধান দেশ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পরিযায়ী পাখিরা এসে কুঞ্জবনের নদীতে আশ্রয় নেয়। শীতের শুরুতে আসতে থাকে পাখি। নদীতে বছরের চার-পাঁচ মাস পাখিগুলো থাকে। সারা দিন নদীতে থাকলেও রাতে পাখিগুলো ফিরে যায় পাশের বিল মোহাম্মদপুর, রামচন্দ্রপুর, মধুবনসহ কয়েকটি স্থানে। ভোরে আবারও ফিরে আসে নদীতে।

মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে কুঞ্জবন গ্রাম। পাখিদের কেউ যেন উত্ত্যক্ত, বিরক্ত বা কোনো ধরনের শব্দ না করে সে জন্য সব সময় সচেতন করা হচ্ছে। পরিযায়ী পাখি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে নানা বয়সী দর্শনার্থীরা আসেন।

আত্রাই নদীতে অবাধ বিচরণ এসব পরিযায়ী পাখির। আবাসের নিরাপত্তায় প্রশাসনের পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন

নওগাঁ সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া থেকে অতিথি পাখি দেখতে এসেছেন খোরশেদ আলম রাজু। কথা হয় তার সঙ্গে। রাজু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই প্রথম এখানে এসেছি অতিথি পাখি দেখতে। আত্রাই নদীতে পাখির কলরবে পুরো কুঞ্জবন এলাকা মুখরিত। কিচিরমিচির শব্দে একটা অন্য ধরনের সুখ পাওয়া যায় এখানে। খুব ভালো লাগছে এখানে আসতে পেরে।’

তিনি বলেন, সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি যদি সরকারিভাবে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে আগামীতে এই এলাকায় পাখিদের আরও বেশি আগমন ঘটবে, সেই সঙ্গে এলাকাটি ঘিরে সুস্থ বিনোদনের কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে।

রাজশাহী শহরের সাহেবপাড়ার গৃহিণী জাকিয়া জেসমিন এসেছেন পরিবার নিয়ে ঘুরতে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘অতিথি পাখির কলকাকলিতে সত্যিই আমি মুগ্ধ। এতগুলো অতিথি পাখি একসঙ্গে এর আগে কখনও দেখিনি। তবে পাখিদের নিরাপদ আশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আমার মনে হয় আরও বেশি পাখি আসবে।’

কুঞ্জবন গ্রামে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছে

বিচিত্র পাখি উৎপাদন গবেষণা পরিষদ নামের সামাজিক সংগঠনের পরিচালক মুনসুর সরকার বলেন, ‘অতিথি পাখিদের নিরাপদ অবস্থানের জন্য নদীর পানিতে বেশ কিছু বাঁশ দিয়ে ঘের তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে পানিতে পড়ছে। কেউ গা ভাসিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ গা পরিষ্কার করছে। আবার কেউ বাঁশের ওপর বসে আরাম করছে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে নদীর দুপার।

‘এবার বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরাসহ প্রায় ১০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বিচরণ এখানে। কেউ পাখি শিকার বা মাছ শিকার করতে গিয়ে পাখিদের বিরক্ত না করে সে জন্য আমরা কাজ করছি।’

মুনসুর সরকার বলেন, সরকারিভাবে যদি কুঞ্জবনকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাহলে পাখিদের নিরাপদ আবাস গড়ে তোলা সম্ভব। সেই সঙ্গে সরকারি উদ্যোগ নিয়ে এলাকায় জীব-বৈচিত্র্যের নিরাপদ আবাসস্থল হতে পারে। এ ছাড়া বিনোদনের প্রাণ হিসেবে পরিচিতি পাবে এই কুঞ্জবন গ্রাম।

মহাদেবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ কে এম জামান বলেন, পাখিদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিতে নদীতে কেউ যেন নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করার কারণে বাধাগ্রস্ত না হয়, কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে লক্ষ রাখা হচ্ছে।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এখানে পাখি শিকার নিষিদ্ধ এবং আগত পরিযায়ী পাখি প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে কেউ যদি শিকার করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর