বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহ বটতলায় (গোলাবাড়ী) মানুষের ঢল। এখানে বসেছে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা।
মেলায় উঠেছে বিরাট বিরাট মাছ। দুই শতাধিক দোকানে এসব মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন মেলায় এসেছেন মাছ কিনতে। সবাই সাধ্যমতো মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন।
নামে মাছের মেলা হলেও কী নেই এতে। ঘর সাজানোর আসবাব থেকে শুরু করে গৃহস্থালি নানা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। বিনোদনের জন্য আছে সার্কাস, নাগরদোলা, পালাগানসহ নানা আয়োজন।
মাঘের শেষ বুধবার অথবা ফাগুন মাসের প্রথম বুধবার এ মেলা শুরু হয়। মেলার পরদিন বৃহস্পতিবার বসে ‘বৌ’ মেলা। এদিন গ্রামের মেয়েরা স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন।
বুধবার পোড়াদহ মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, নানা প্রজাতির বড় বড় মাছ মেলায় উঠেছে। বিশেষ করে যমুনা-বাঙ্গালী নদীতে ধরা পড়া বাঘাইর, আইড়, বোয়াল, কাতলা, পাঙ্গাশসহ আরও নানা প্রজাতির মাছ।
বড় বড় মাছ দেখতে ও কিনতে ভিড় করেন অনেকে।
এবার মেলায় ৬৫ কেজি ওজনের একটি বাঘাইর মাছ ওঠে। বিক্রেতা গাবতলী উপজেলার পশ্চিম মহিষাবান ইউনিয়নের শুক্র সাকিদার মাছটির দাম চান ১ লাখ টাকা।
এ ছাড়াও মেলায় উঠেছে কাঠের আসবাবপত্র, বাঁশ ও বেতের সামগ্রী, ফলমূল ও নানা ধরনের মিষ্টি।
মেলায় এসেছেন আলম হোসেন। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবারের মেলায় গতবারের তুলনায় বড় মাছ ওঠেনি। বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি, মাছ নিয়েই বাড়ি ফিরব।’
মেলায় মাছের দরদাম করছেন বেলাল। কয়েকটা দোকান ঘুরেও তার মাছ কেনা হচ্ছে না। কোনোটা দামে আবার কোনোটা মনে মিলছে না।
বেলাল বলেন, ‘মেলায় মাছ কিনব বলে মাস দুয়েক আগেই কিছু টাকা রেখেছি। দেখছি, পছন্দ হলেই কিনব। ওদিকে বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে।’
বগুড়া শহর থেকে মেলায় আসা মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘৪০ বছর আগে এই মেলায় এসেছিলাম। ওই সময় মেলায় যা দেখেছি তার তিন ভাগের এক ভাগও এখন নেই। মাছ কিংবা অন্যান্য সামগ্রী দেখে হতাশ।’
গাবতলী উপজেলার মহিষবান ইউনিয়নের মনতেজার আলী জানান, তুলনামূলকভাবে এবার মেলায় দর্শনার্থী কম। জোগান কম মাছেরও। অথচ এই মেলা মাছের জন্যই বিখ্যাত।
স্থানীয়রা ও মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, মেলায় বিক্রয়ের জন্য বেশ আগে থেকেই বাঘাইর, আইড়সহ বড় মাছ ধরে পুকুর বা জলাশয়ে বেঁধে রাখা হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগঞ্জের সবাই তাদের জামাইকে নিমন্ত্রণ করেন। বড় আকারের মাছ দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হয়।
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য মোকসেদুল আলম দোয়েল নিউজবাংলাকে বলেন, মেলায় এবার মোট ৫০০টি দোকান বসেছে। এর মধ্যে মাছের দোকান রয়েছে দুই শতাধিক। তবে এবার বড় মাছের আমদানি কম।