বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পিটুনিতে জখম তরুণকে ‘ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখায়’ মৃত্যু

  •    
  • ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১০:৫৭

নিহত বোরহানের মা রঞ্জু বেগম জানান, গত শনিবার মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী সন্দেহে ছেলেকে পিটিয়ে জখম করে স্থানীয় কয়েক জন। রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশ তাকে রাজগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে নেয়। সেখানে দীর্ঘ সময় বিনা চিকিৎসায় বসিয়ে রাখায় তার ছেলের মৃত্যু হয়।

যশোরের মনিরামপুরে বোরহান কবির নামের এক তরুণকে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

রক্তাক্ত অবস্থায় রাজগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রাখায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। তবে রাজগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক তপন নন্দী বলেন, তাকে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।

মনিরামপুরের রাজগঞ্জ খালিয়া গ্রামে গেল শনিবার সকাল ৯টার দিকে বোরহানকে মারধর করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তবে মঙ্গলবার রাতে বোরহানের পরিবার স্থানীয় সাংবাদিকদের এই অভিযোগ করলে ঘটনাটি আলোচনায় আসে।

বোরহান রাজগঞ্জ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

তার মা রঞ্জু বেগম জানান, গত শনিবার মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী সন্দেহে বোরহানকে পিটিয়ে জখম করে স্থানীয় কয়েক জন। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয় রাজগঞ্জ-হেলাঞ্চি সড়কে। পুলিশ তাকে সেখান থেকে হাতকড়া পরিয়ে রাজগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে নেয়।

খবর পেয়ে রঞ্জু বেগম ফাঁড়িতে যান। তিনি বলেন, ছেলেকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। বোরহান মানসিক রোগী বলা হলে ফাঁড়ির এসআই তপন কুমার নন্দী এর প্রমাণ চান। এরপর ১২ কিলোমিটার দূরের বাড়ি থেকে চিকিৎসার কাগজপত্র এনে দেখানোর পর বোরহানকে যেতে দেয়া হয়।

রঞ্জু বেগম জানান, বোরহানকে সেখান থেকে দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পাঠানো হয় যশোর জেনারেল হাসপাতালে। সেখানেই সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।

রঞ্জু বেগমের অভিযোগ, রক্তাক্ত অবস্থায় দীর্ঘ সময় ফাঁড়িতে বিনা চিকিৎসায় বসিয়ে রাখায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় বোরহানের। এ কারণে তার মৃত্যু হয়।

বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘আমার সুনারে ওরা চিকিৎসা না করায়ে হাতকড়া পরায়ে ফাঁড়িতে বসায়ে রাখে। এই জন্যি তার মিত্যু হইছে। সে কয়দিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন হইছিল। তার চিকিৎসাও চলতিছিল।

‘সুনারে পড়ানোর জন্যি সেলাই সেন্টারে আমি কাজ করিছি। আমার সুনার ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালিখা করার। সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না।’

তবে রঞ্জু বেগমের অভিযোগ ঠিক নয় জানিয়ে ওই পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক তপন বলেন, খবর পেয়ে তারা রক্তাক্ত অবস্থায় বোরহানকে উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নিয়ে যান। এ সময় মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী হাদিউজ্জামান নাঈমকেও তারা ফাঁড়িতে নিয়ে যান। বোরহানের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্থানীয় চিকিৎসক সিরাজুল ইসলামকে ডেকে নেয়া হয়।

তপন বলেন, ‘রক্ত বন্ধ করতে ওই চিকিৎসক বোরহানের ক্ষত স্থানে সেলাইও দেন। সেলাই দিতে যতক্ষণ সময় লাগে, ততক্ষণ মানে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মতো তাকে ফাঁড়িতে রাখা হয়েছিল। এরপর তাকে পরিবারের কাছে দেয়া হয়। মারধরের ঘটনায় এক জনকে আটক করা হয়েছে, মামলাও হয়েছে।’

রাজগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহজাহান আহমেদও বলেন, বোরহানের পরিবারের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তার সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়েছে। মনিরামপুর হাসপাতালে পাঠানোর পর তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবরও নেয়া হয়েছে।

স্থানীয় চিকিৎসক সিরাজুল জানান, শনিবার বেলা ১১টার দিকে এসআই তপন তাকে (সিরাজুল) ফাঁড়িতে ডেকে নেন। সেখানে হাতকড়া পরানো ও মাথায় ব্যান্ডেজ করা বোরহানকে তিনি দেখতে পান। ওই ব্যান্ডেজ পাল্টে তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলেন তিনি (সিরাজুল)।

মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুমন নাগ বলেন, বোরহানকে দুপুর ১টার দিকে ভর্তি করা হয়। তার শারীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়।

বোরহানকে মারধরের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন খালিয়া গ্রামের স্থানীয় দোকানদার হাবিবুর রহমান।

তিনি জানান, সাগরা-কৃষ্ণবাটি গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে নাঈম তার মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে বোরহানকে লাঠি দিয়ে মারধর করে। এরপর তাকে রাস্তার পাশে ক্ষেতে ফেলে রাখে। সেখানে আরেক যুবক বোরহানকে মারধর করে। এরপর রাজগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ বোরহানকে নিয়ে যায়। নাঈমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব বেরিয়ে আসবে।

এ বিভাগের আরো খবর