ভোলার চরফ্যাশনে কলেজছাত্রীর মুখে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা সাজানো বলে দাবি করেছেন মামলার এক আসামির পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, পূর্ব বিরোধের জেরে বাদীপক্ষই ঘটনাটি সাজিয়ে মামলা করেছেন।
ভোলা প্রেসক্লাবে রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগে করা মামলার আসামি বেলায়েত হোসেন তোতার পরিবারের সদস্যরা।
গত শুক্রবার চরফ্যাশন থানায় ওই মামলার পর থেকে পলাতক রয়েছেন বেলায়েত হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে তার বোন মোসাম্মৎ সুখী জানান, বেলায়েত চরফ্যাশনের আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। এ জন্য গণসংযোগও শুরু করেন।
সুখী বলেন, একই ওয়ার্ড থেকে ওই কলেজছাত্রীর বাবাও নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দেন। বেলায়েতকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য এক লাখ টাকাও দিতে চান ওই ব্যক্তি। তা নিতে রাজি ছিলেন না বেলায়েত। এ সব নিয়েই তাদের দুই জনের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
তিনি বলেন, এরই জেরে গেল বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমন্ত মেয়ের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের মিথ্যা অভিযোগ তুলে বেলায়েতের বিরুদ্ধে শুক্রবার মামলা করেন ওই ব্যক্তি।
ওই কলেজছাত্রীকে বৃহস্পতিবারই চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পুলিশের ধারণা, তিনি অ্যাসিড হামলার শিকান নন।
চিকিৎসক বলছেন, রোগীর শরীরে যে দাগ রয়েছে তা প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যাসিডে পোড়া মনে হচ্ছে না।
ওই মেয়ের বাবা মামলায় অভিযোগ করেছেন, এলাকার মিনা বাজারের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিশোধ নিতে বেলায়েত তাকে অ্যাসিড নিক্ষেপ করেন। হানিফ মাঝি নামের আরও এক জনকে আসামি করা হয় মামলায়।
তবে ওই বাজারে বেলায়েতদের কোনো জমি নেই বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন সুখী। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, মামলার আগে বেলায়েতকে এলাকা ছাড়া করার হুমকিও দিয়েছিলেন কলেজছাত্রীর বাবা।
সুখী বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’
আসামির পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজছাত্রীর বাবা বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে ধারণা করে প্রথমে চার জনকে আসামি করা হয়েছিল। এর মধ্যে দুই জনের সঙ্গে প্রকৃতপক্ষেই তাদের জমি নিয়ে বিরোধ আছে। তবে পরে তার ছেলে ঘটনাস্থলে বেলায়েত ও হানিফকে দেখেছেন জানানোয় মামলায় তাদের আসামি রেখে অন্য দুই জনের নাম বাদ দেয়া হয়।
নাম বাদ দিলেও এজাহারে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনার কথা কেন রয়েছে- এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মিঞা জানালেন, ঘটনা তদন্তে তিনি মেয়েটির সঙ্গে দেখা করেছেন। তার মুখে ছোট একটি কালো দাগ ছাড়া আর কোনো দাগ চোখে পড়েনি। ওই দাগও অ্যাসিডে পোড়া বলে মনে হয়নি। তদন্ত চলছে। আসামি গ্রেপ্তার হলে বিস্তারিত জানা যাবে।
ঘটনার দিন ওই কলেজছাত্রীকে ভর্তি করা হয় চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হাসপাতালের চিকিৎসক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই রোগী আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়। আমরা তাকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। তবে রোগীর শরীরে যে দাগ রয়েছে তা প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের কাছে অ্যাসিডে পোড়া মনে হচ্ছে না। তবে অ্যাসিড জাতীয় ক্যামিকেল হতে পারে। বিষয়টা ল্যাবে টেস্ট করালে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’