২০১১ সালে মানসিক ভারসাম্যহীন জব্বার আলী শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের উল্লারপাড় গ্রামে নিজের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। সন্তানের খোঁজে কি করেননি মা-বাবা। বছরের পর বছর খুঁজেছেন। একপর্যায়ে আশা ছেড়ে দেন তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এক ফেসবুক পোস্টে সেই সন্তান জব্বার আলীকে দীর্ঘ নয় বছর পর ভারতের জেল থেকে ফিরে পেয়েছে পরিবার।
আশা হারানো বাবা সেকান্দার আলী ও মা সুবুরী খাতুন ফিরে পেয়েছেন সন্তান জব্বার আীলকে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন ও বাড়ির পাশের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ানের প্রচেষ্টায় হারিয়ে যাওয়া সন্তান জব্বার আলীকে ফিরে পান তারা।
গত বছরের ৭ অক্টোবর নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল আলম উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে ভারতের কারাগারে আটক জব্বারের ছবি, নাম, ঠিকানা দিয়ে সহযোগিতা চেয়ে পোস্ট করেন।
ফেসবুকে জব্বারের ছবি ও নাম ঠিকানা দেখে উল্লারপাড় গ্রামের কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান চিনতে পারেন। পরে সুফিয়ান ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন জানতে পারেন, জব্বার ভারতের কারাগারে রয়েছেন। সুফিয়ানকে ইউএনও মাহফুজুল মৌলভীবাজার সদরের ইউএনও শরিফুল ইসলাম সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে কথামতো জব্বারের পরিচয়পত্র, নাগরিক সনদ মৌলভীবাজারের সদরের ইউএনও শরিফুল ইসলামের ই–মেইলে পাঠানো হয়। পরে শরিফুল ইসলাম সুফিয়ানকে দুই মাস অপেক্ষা করতে বলেন। এরইমধ্যে সুফিয়ান জব্বারের বাবা-মাকে তাদের হারানো ছেলে ভারতের কারাগারে রয়েছেন বলে ফোনে জানান।
হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে খুঁজে পাওয়ার পর এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় জব্বারদের বাড়িতে। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি ছুঁয়ে গেছে প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে এলাকাবাসী সবাইকে।
সেকান্দার আলী জানান, তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলে জব্বার আগে ভালো ছিলেন। ২৩ বছর বয়সে হঠাৎ তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এর তিন বছর পর মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন জব্বার। মা–বাবাসহ পরিবারের লোকজন আত্মীয়স্বজনসহ সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় তিন-চার বছর খোঁজার পর মা–বাবা ছেলের আশা ছেড়ে দেন। পরে জব্বারের মা–বাবা কাজ করতে ঢাকায় আসেন। তারা ঢাকাতেই বাস করেন। বাবা সেকান্দার আলী ভাঙারির ব্যবসা করেন, আর মা সুবুরী গৃহপরিচারিকার কাজ করেন।
জব্বার ফিরে আসার পর জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি সিলেটের নয়ানিবাজার শুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে ভারতের কারাভোগ করা ১৯ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করে ভারত কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৯ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা জব্বারও রয়েছেন। জব্বারের জন্য সীমান্তে অপেক্ষায় ছিলেন বাবা সেকান্দার আলী ও সুফিয়ান।
ছেলেকে পাওয়ার পর সেকান্দার আলী জব্বারকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পুরো বিষয়টিতে তাদের সহযোগিতা করেন সেখানকার আইনজীবী অমেলেন্দু কুমার।
সেকান্দার আলী বলেন, ‘ছেলে নিখোঁজের পর বহু জায়গায় খুঁজেছি। পরে ধরেই নিয়েছি জব্বার হয়তো বেঁচে নেই। ওর মা ছেলের জন্য সব সময় কান্নাকাটি করেছে। পরে সুফিয়ানের কাছে খবর পেয়ে বিশ্বাস করতে পারি নাই। এখন ছেলেকে ফিরে পেয়েছি।
‘ইউএনও স্যার, উকিল ভাই আর সুফিয়ান না থাকলে আমি জব্বাররে ফিরে পেতাম না। আমি তাদের ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারমু না।’