প্রসব বেদনা নিয়ে নওগাঁর বেসরকারি ক্লিনিক মেট্রো হাসপাতালে ভর্তি হন বন্যা খাতুন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফুটফুটে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু এর পর আর বাঁচলেন না।
রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানান, সেখানে নেয়ার আগেই মৃত্যু হয়েছে বন্যার।
এর পর তার লাশ নিয়ে ওই ক্লিনিকের সামনে অবস্থান নেন স্বজনেরা। তাদের অভিযোগ, মেট্রো হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে বন্যার। এ জন্য চিকিৎসক ও ক্লিনিক পরিচালকের শাস্তি দাবি করেন তারা।
মৃত প্রসূতির বাড়ি সদর উপজেলার চকপ্রাণ মহল্লায়।
বন্যার বাবা শামসুল আলম নিউজবাংলাকে জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় বন্যাকে সিজার করার জন্য মেট্রো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কোনো পরীক্ষা না করেই এক ঘণ্টা পর তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। অপারেশন করেন জেনিফা ইসলাম তিশা।
শামসুল বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি যে ডাক্তার আপা আমার মেয়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা আগে করে নিন। কিন্তু তিনি উল্টা আমাদের ধমক দিয়ে বলেন, আমি ডাক্তার। আমার চেয়ে আপনারা বেশি জানেন না।’
সিজারের পর বন্যার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে তাকে আবার অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। এরপরও রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য বন্যাকে অন্য হাসপাতালে নিতে বলেন।
বন্যার ননদ হিরা খাতুনও বলেন, ‘আমরা রক্তক্ষরণ নিয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন, আপনারা রোগী নিয়ে এখন যেখানে ইচ্ছা গিয়ে চিকিৎসা করান। আমি আর কিছু করতে পারব না।’
এরপর ওইদিন সন্ধ্যার দিকে বন্যাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক জানান, রোগীর অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে।
শামসুল জানান, রাতে মরদেহ রাজশাহীতেই অ্যাম্বুলেন্সে রাখেন। শনিবার সকালে নওগাঁর মেট্রো হাসপাতালে নিয়ে এলে হাসপাতালের ডাক্তার বা কোনো কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে দেখা করেননি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মেট্রো হাসপাতালের পরিচালক সালমা হোসেন ও চিকিৎসক জেনিফা ইসলাম তিশার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা কেউই ফোন ধরেননি। হাসপাতালে গিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে এখনও কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নওগাঁর সিভিল সার্জন এ বি এম আবু হানিফ বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। সিভিল সার্জন অফিস থেকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।