বিয়ের কিছুদিন পর স্বামীর সঙ্গে যান চট্টগ্রাম। কিন্তু তার স্বামী আরেকটি বিয়ে করেন। এ নিয়ে অশান্তি। পারিবারিক কলহ। তার ওপর চলে নির্যাতন।
একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এরপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। স্বজনরা অনেক তালাশ করেছেন। কিন্তু কোথাও সন্ধান মেলেনি।
স্বজনরা জানতেও পারেননি, তিনি পথভুলে ভারতে প্রবেশ করেছেন। অনুপ্রবেশের দায়ে কলকাতায় তিন বছর কারাভোগ। এরপর একটি মানবাধিকার সংস্থার কল্যাণে মুক্তি। তাদের কাছেই মেলে আশ্রয়। এভাবে আট বছর পার।
কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রচেষ্টায় সোমবার বাড়ি ফিরে এসেছেন তিনি। যার বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাকে হঠাৎ ফিরে পেয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন মা। তাকে জড়িয়ে ধরে মেয়েও আনন্দাশ্রু ঝরান। খবর পেয়ে তাকে এক নজর দেখতে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। বাদ যাননি দূরের স্বজনরাও।
তার নাম সাজেদা আক্তার ফেলানী। বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দ মালিবাড়ী গ্রামে।
ফেলানীর চাচা আব্দুল লতিফ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, আজ থেকে প্রায় পঁচিশ বছর আগে ফেলানীর বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের খোর্দ্দ মালিবাড়ীর দক্ষিণপাড়া গ্রামের ফয়জার হোসেনের সঙ্গে। বিয়ের পর পরই ফেলানীকে নিয়ে কাজের সন্ধানে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে যান তার স্বামী। তবে কিছুদিন পর সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ফয়জার।
তিনি বলেন, এরপরই ফেলানীর জীবনে নেমে আসে চরম নির্যাতন। একপর্যায়ে নির্যাতন করে ফেলানীকে গাইবান্ধার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বামী ফয়জার। কিছুদিন পর ফেলানী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালের ঘটনা। একদিন হঠাৎ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ফেলানী। এরপর আর তার কোনো খোঁজ পাননি তারা। এ ঘটনায় গাইবান্ধা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
সেই দিনের ঘটনা সম্পর্কে ফেলানী বলেন, ‘স্বামীকে খুঁজতে চিটাগাং শহরে গিয়ে নামছি। ওটি থাকি দুইজন মানুষ আমাক বাংলাদেশের ওমুরেত নিয়ে গেছি। তখন মাথায় খেলে নাই। ভুল করে ভারত গেছি।’
মেয়েকে ফেরত পাওয়ার পর ফেলানীর মা গোলভান নেছা বলেন, ‘মেয়েটাক পেয়ে খুশি নাকছে। কিন্তু মেয়েটার সোয়ামির তো খোঁজ নাই। এখন মেয়েটাক কী গতি করমো।’