নওগাঁয় পুলিশের হাতে তিন আইনজীবী লাঞ্ছিতের অভিযোগে আদালত বর্জন করেছেন জেলার আইনজীবীরা। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বরখাস্তের দাবিতে আদালত চত্বরে তারা বিক্ষোভ করেছেন।
এ ঘটনায় আদালতে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন ভবনে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সংগঠনের জরুরি সভায় আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন আইনজীবীরা।
জেলা বারের সভাপতি খোদাদাদ খান পিটু জানান, সোমবার বেলা ১১টার দিকে অ্যাডভোকেট আবু সাঈদ মুরাদ রিকশায় আদালত চত্বরে প্রবেশ করছিলেন। এ সময় প্রধান গেটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রাজিব ও পুলিশ সদস্য মুক্তার হোসেন তাকে রিকশা ভেতরে না নিতে বলেন। আইনজীবী পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ তাকে রিকশা নিয়ে যেতে বাধা দেয়।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক ও অ্যাডভোকেট শাহ আলম সেখানে যান। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের মারধর করেন।
খোদাদাদ বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বরখাস্ত না করা হলে পরে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
আদালত চত্বরে যানবাহন চলাচলে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না, জানতে চাইলে নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, একটি বিশেষ কারণে সোমবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওসি বলেন, সোমবার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার কথা ছিল জেলা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের। এতে আদালত চত্বরে যানজট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই সাময়িকভাবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার বলেন, ‘এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিষয়টি জানার পর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে পুলিশ সদস্যদের অপরাধ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে আইনজীবীদের হঠাৎ করে নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে সোমবার ব্যাহত হয় আদালতের সব কার্যক্রম। সেখানে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে যেতে হয়।
নওগাঁর রাণীনগর থেকে আদালতে আসা ৫৫ বছর বয়সী রকিম উদ্দিন বলেন, ‘সকাল ১০টার পর হামি আদালতে আসিছি। হঠাৎ ১১টার দিকে দেখি উকিল বাবুরা কাজ বাদ দিয়া আদালত নাকি বর্জন করিছে। জমিজমা নিয়া আদালতোত হামার অ্যানা কাজ আসল। একন কি আর করার বাড়িত ফিরা যাওয়া লাগিচ্চে।’
মান্দা থেকে আদালতে এসেছেন ৪৫ বছর বয়সী ধান ব্যবসায়ী আকবর আলী। তিনি বলেন, ‘সকাল ১১টায় আদালতে আইসা দেখি আইনজীবীরা আদালত বর্জন করে মিছিল করছে। তিনজন উকিলকে নাকি পুলিশ লাঞ্ছিত করছে। পারিবারিক বিষয়ে একটি মামলা চলছে আদালতে, সেজন্য এসেছিলাম। এখন কবে তারা আদালতে আবার কাজ শুরু করবে, সেইটা উকিলবাবু আমাকে জানায় নাই। কী আর করার বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।’