বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘এই ব্রিজ আঙ্গর জন্যি অভিশাপ’

  •    
  • ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৯:০৯

জামালপুর সদরের কেন্দুয়া ইউনিয়নের মোহাডাঙ্গার ফিরোজ আলী শেখ জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলা প্রশাসন সেখানকার একটি পদচারী সেতুর সংযোগ সড়ক ও গাইডওয়াল নির্মাণের জন্য এডিপির আওতায় বরাদ্দ দেয়। কাজ না করে সেই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

জামালপুর সদরের কেন্দুয়া ইউনিয়নে সংযোগ সড়ক ও গাইড ওয়াল না থাকায় ছয় বছর ধরে বেহাল একটি পদচারী সেতু। যাতায়াতের আর কোনো মাধ্যম না থাকায় এই বেহাল সেতু দিয়েই চলাফেরা করতে হয় গ্রামবাসীর। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের, অনেকে আহতও হন। বিশেষ করে কৃষিপণ্য পরিবহণে দুর্ভোগ হয় বেশি।

সেতু সংস্কারের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ এলেও কেন কাজ হয়নি তার উত্তর নেই স্থানীয় প্রশাসন কিংবা প্রকৌশলীর কাছে।

কেন্দুয়ার মোহাডাঙ্গা সড়কের গবাখালী খালের উপর ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয় ১২ মিটারের সেতুটি। পরের বছরই বন্যায় এর সংযোগ সড়কের মাটি ধসে পড়ে।

এই সেতু ব্যবহার করেন মোহাডাঙ্গা, গাজীপুর, নয়াপাড়া, কাপাসিয়া ও চরজালালীপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। মোহাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, এই ব্রিজ ছাড়া গ্রামবাসীর যাতায়াতের আর কোনো উপায় নাই।

সংযোগ সড়কহীন ব্রিজ দিয়ে এভাবেই চলাফেরা করেন গ্রামবাসী, অনেক সময় আহতও হন অনেকে। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি বলেন, ‘এডে দিয়াই যাওয়া লাগে। খুব কষ্ট কইরে এই ব্রিজ দিয়া ফসল নিয়া যাওয়া লাগে। এমনেই সব ফসল কষ্ট কইরেই নিয়ে যায়। কিন্তু ধানের সিজনে ব্রিজের নিচ দিয়া ধান নেওয়া লাগে। ব্রিজ থাকাতে আঙ্গর আরো কষ্ট হয়ছে।’

ওই গ্রামের ইউসূফ মিয়া বলেন, ‘এই ব্রিজের দুই সাইডে ৪ থেকা ৫ ফুট মাটি নাই। একবার ব্রিজে উঠবার যাইয়ে হাটুতে ব্যাথা পাইছি। হাজার হাজার টাকা দিয়ে হাটু ঠিক করলাম। আরেকজনের মাজায় সমস্যা হয়া গেসে। এই ব্রিজের কারণে অনেকেই অনেক ব্যাথা পাইছে। এই ব্রিজ আঙ্গর জন্যি একটা অভিশাপ।’

গ্রামের আরেক বাসিন্দা মারিয়া আক্তার জানান, শিশু ও বৃদ্ধদের এই ব্রিজ দিয়ে চলাচলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। তাদের জন্য এটা ঝুঁকিপূর্ণ।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, সরকার বরাদ্দ দেয়ার পরও মেরামত করা হয়নি সেতুটি। মোহাডাঙ্গার ফিরোজ আলী শেখ জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলা প্রশাসন এই সেতুর সংযোগ সড়ক ও গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য এডিপির আওতায় বরাদ্দ দেয়। কাজ না করে সেই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। একই অভিযোগ গ্রামের শাহীন শেখসহ অনেকের।

বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করে জামালপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রমজান আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কয়েক মাস আগে জামালপুর সদর উপজেলায় যোগদান করি। এই বিষয়ে আমি খোঁজ নিয়েছি। সেইসময় তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক সংস্কার এবং পদচারী সেতুটির সংযোগ সড়ক ও গাইডওয়াল নির্মাণের জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এডিপির আওতায় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। শুধু সংযোগ সড়ক ও গাইডওয়াল নির্মাণের জন্য ৯০ হাজার ১০২ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কেন এই সেতুটির কাজ করা হলো না তা আমার আগের কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন। তবুও আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সরকারি বরাদ্দ এলেও নির্মাণ হয়নি ব্রিজটির সংযোগ সড়ক। ছবি: নিউজবাংলা

সে সময় সদর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এস এম শহিদুল ইসলাম। এখন তিনি মাদারগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত। ফোনে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা তো গত চার বছর আগের কথা। এখন আমার সঠিক মনে হচ্ছে না। তবুও আমার যতটুকু মনে হয়, কাজ শেষ হওয়ার পরে আমি বিল দিয়েছিলাম বলে আমার মনে হচ্ছে।’

বরাদ্দ আসলেও কেন কাজ হয়নি, সেই টাকা-ই বা কোথায় গেল? এর উত্তরে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ‘এডিপির অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি আমার জানা নাই। কারণ আমি দুই বছর আগে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেছি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।’

তিনি আরও জানান, আগামী অর্থবছরে এই সেতুর সংযোগ সড়ক ও গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য আবারও উপজেলা প্রশাসন অর্থ বরাদ্দ দেবে।

এ বিভাগের আরো খবর