সিলেটের মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ আবারও পিছিয়েছে।
সাক্ষ্য গ্রহণের দিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হকের আদালতে মামলার আট আসামিকে হাজির করা হয়। তবে কোনো সাক্ষী আসেননি।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখেও সাক্ষীরা হাজির হননি।
মামলাটিতে মোট ৫১ জনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। বুধবার মামলার বাদীসহ ৫ জনের সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল পিপি রাশিদা সাঈদা খানম বলেন, ‘মামলায় প্রথমে বাদীপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করার কথা। তবে দুই তারিখেই বাদীপক্ষ সাক্ষীদের হাজির করেনি।’বাদীপক্ষের আইনজীবী শহিদুজ্জামান চৌধুরী জানান, এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় দুটি আলাদা মামলা হয়েছে। ২৪ জানুয়ারি আদালতে দুটি মামলার একসঙ্গে বিচার কাজ শুরু করার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু বিচারক আবেদন খারিজ করে দেন।
তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা আবেদন নিয়ে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। উচ্চ আদালতে বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় আজ সাক্ষীদের হাজির করা হয়নি।’
শহিদুজ্জামান চৌধুরী জানান, ছাত্রাবাসে তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের আগে তার স্বামীকে মারধর ও টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়। ধর্ষণ মামলার আট আসামিই এই মামলার আসামি। এতে ধর্ষণ মামলার সাক্ষীদেরও সাক্ষী রাখা হয়। একই ঘটনার আলাদা দুটি মামলা দুটি আদালতে চললে বিচারে দেরি হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া সাক্ষীদের দুই জায়গায় সাক্ষ্য দিতে হবে এবং বিচারও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। তাই আমরা দুই মামলা একই আদালতে একইসঙ্গে চালানোর আবেদন করেছি।’
তিনি জানান, হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে আসার পর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
১৭ জানুয়ারি ধর্ষণ মামলার অভিযোগ গঠন করে আদালত। এর আগে ৩ ডিসেম্বর সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আবুল কাশেমের আদালতে আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।এতে সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ছয় জনের বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্ষণে জড়িত থাকা এবং অপর দুই জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম ওরফে রাজনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত করা হয়।
আসামি রবিউল ও মাহফুজুরকে ধর্ষণে সহায়তায় অভিযুক্ত করা হয়। আট আসামিই বর্তমানে কারাগারে আছেন। এরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিতি।
২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক নারী। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণ করা হয়।
ওই রাতেই ওই নারীর স্বামী ছয় জনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক জনকে আসামি করে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেন।