রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ছবি বিকৃত করে অবমাননার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে পুলিশের তদন্তেও।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র বর্মণসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন মেট্রোপলিটন তাজহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইজার আলী।
তিনি ৫ জানুয়ারি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৩-এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
অভিযুক্তদের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন মেট্রোপলিটন আমলী আদালত-৩-এর জিআরও মঞ্জুরুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ না পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও তার ব্যক্তিগত সহকারী আমিনুর রহমানকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এর আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৮ ডিসেম্বর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানীকে কমিটির প্রধান করা হয়। সদস্য করা হয় মুক্তিযোদ্ধা সদরুল ইসলাম দুলু ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. জিন্নাহ আলীকে।
তারা ২২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন জমা দেন। তাতে ১৯ জনকে অভিযুক্ত করে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করেন উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইজার আলী নিউজবাংলাকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা অবমানার অভিযোগ এনে ১৭ ডিসেম্বর তাজহাট থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগোযোগ বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান পৃথক মামলা করেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় ১৯ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৩-এ জাতীয় পতাকা ও প্রতীকের অবমাননার তদন্ত এবং তদন্ত পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ চেয়ে আবেদন করি। আদালত ২০ ডিসেম্বর শুনানি শেষে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। আমি তদন্ত করে ৫ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দিই।’
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ১৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ উল হাসান, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাম প্রসাদ বর্মণ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মো. রহমতুল্লাহ,পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবু সায়েম, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সরকার, পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. মো. কামরুজ্জমান, বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক পিরমল চন্দ্র বর্মণ, গণিত বিভাগের অধ্যাপক আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোস্তফা কাইয়ুম শারাফাত, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহ জামান, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ নুর আলম সিদ্দিক, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদ আলম, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রশীদুল ইসলাম, পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চার্লস ডারউন, সেকশন অফিসার শুভঙ্কর চন্দ্র, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসেন ও ম্যানেজম্যান্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রধান ছদরুল ইসলাম সরকার পাঁচ পয়সা আকৃতির লাল বর্ণের বৃত্ত সংবলিত বিকৃত জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে ছবি তোলেন। তারা সবাই ২০২০ সালে মহান বিজয় দিবসের স্মৃতি ধরে রাখতে বিকৃত জাতীয় পতাকা হাতে ধরে মাটি স্পর্শ করে সামনে নিয়ে ছবি তোলেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ৪ (২) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন তথা জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধনী-২০১০) লঙ্ঘনের অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে।