নিরাপত্তাকর্মীদের ‘খারাপ আচরণের’ প্রতিশোধ নিতে বগুড়ার এক কিশোর ব্যাংকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বলে স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
১৮ দিন আগের ওই ঘটনায় গত শুক্রবার কিশোরকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে বগুড়া পুলিশের বিশেষ একটি দল। সে দিনই সন্ধ্যায় বগুড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসমা মাহমুদের আদালতে তোলা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
বগুড়া গাবতলী সার্কেলের সিনিয়র পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫ জানুয়ারি বগুড়ায় সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে গাবতলীর পীরগাছা শাখায় রূপালী ব্যাংকে চুরির চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দুই আনসার সদস্যকে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে ওই কিশোর।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ওই কিশোর জানায়, তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ১৮ সেপ্টেম্বর সে বিদ্যুতের বিল দিতে রূপালী ব্যাংকের সাবেকপাড়া শাখায় যায়। এ সময় ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী তার সঙ্গে ‘খারাপ আচরণ’ করেন। সেই ঘটনার শোধ নিতেই সে ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী যে কক্ষে থাকতেন তার পাশের ঘরে জানালা দিয়ে আগুন দেয়।
স্বীকারোক্তিতে কিশোর বলে, এতে কিছু না হওয়ায় সে ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মুঠোফোন বন্ধ করে ব্যাংকের ছাদে ওঠে। সেখানে অপেক্ষা করতে থাকে। রাত তিনটায় সে ব্যাংকের ফটকের তালা কেটে ফেলে। ভোর ৫টা ৩৭ মিনিটে নিচের ফটকের তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করে সে একজন নিরাপত্তাকর্মীর চোখে নাইট্রোজেন জেল ঢেলে দেয়। এরপর মেঝে পিচ্ছিল করতে অ্যাসিটোনাল অ্যালকাইন ঢেলে দেয়।
কিশোর জানায়, এক জন নিরাপত্তাকর্মীকে কান ধরে উঠবস করিয়েছে সে। আরেক জনের হাত বাঁধতে গেলে অন্যজন পালানোর চেষ্টা করে। তাকে ধরে মেঝেতে শুইয়ে রাখে। অন্যজনের হাত বাঁধার সময় এক জন দৌড়ে গিয়ে ব্যাংকের ফটক লাগিয়ে দেন। হাত বেঁধে প্যান্টের পেছনের পকেটে রেখে দিলে অন্যজনের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় এক জন চাকু দিয়ে পেটে ছুরিকাঘাত করেন। তখন চাকু কেড়ে নিয়ে এক জনকে ছুরিকাহত করে সে। পরে ব্যাংকের ছাদ দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যায়।
তালা কাটা যন্ত্রটি বাবু মেশিনারিজ নামে একটি দোকান থেকে কেনে বলে জানিয়েছে সে।
বগুড়ার একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করা ওই কিশোর পিএসসি ও জেএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। কিশোরের বাবা কাপড়ের দোকানদার। মা গৃহিনী।
তার বাবা নিউজবাংলাকে জানান, তার ছেলে মা-বাবাকে সব কথাই বলে। পড়াশোনায় খুব আগ্রহ আছে তার। বিভিন্ন বিষয়ে তার জানার আগ্রহ। তার মধ্যে কখনও কোনো অস্বাভাবিক আচরণ দেখেন নি তিনি। সে ইন্টারনেট থেকে কোনো টাকাও আয় করেনি। একটি ল্যাপটপ ব্যবহার করত। কিছুদিন আগে তাকে প্রথম স্মার্টফোন কিনে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার বাসায় নিজস্ব ইন্টারনেট লাইন ছিল না। পাশের বাড়ির এক জনের ইন্টারনেট তার ফোনে শেয়ার করে ব্যবহার করত। সেই লাইনও জানুয়ারি থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে।’