তিন দশক আগে স্বামীহারা দুলালী বেগমের ঠাঁই হয়েছে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের আদর্শ গ্রামের ‘স্বপ্ননীড়’ এ। এতো দিন অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে চলছিল তার জীবন। ৬৫ বছর বয়সী স্বামীহারা এই নারীর আক্ষেপ ছিল একটি বিধবা ভাতা কার্ড নিয়ে।
শনিবার তার আক্ষেপের কথা নিউজবাংলার লাইভ প্রোগ্রামের মাধ্যমে জানতে পারেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিধবা ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন দুলালীর জন্য। এদিন দুলালী সরকারের বিনামূল্যের ঘরের চাবি এবং দলিলও পেয়েছেন।
হঠাৎ বিধবাভাতা কার্ড পাওয়া এই বৃদ্ধার প্রতিক্রিয়া জানতে রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় নিউজবাংলা যায় আদর্শ গ্রামে তার ‘স্বপ্ননীড়’ এ। সেখান থেকে ফেসবুক লাইভে তাকে যুক্ত করা হয়। এ সময় তিনি মানিক চন্দ্র রায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে সুখে আছেন বলে জানান।
দুলালী লাইভে বলেন, ‘সুয়ামি মরি গেছি তিরিশ বছর আগোত। ম্যানষে মোর ঘর-দুয়ের ভাঙি দিছি। এখন ঘর পাচি; জমিন পাচি। যতদিন বাঁচি আছম, এটিত থাকিম।
‘আর এটি-ওটি থাকি চায়া-চিন্তে খাতে হবি না। এখন মোর কার্ড হচি। মাস মাস টেকা পাম।’
সরকারের এই আদর্শ গ্রামে রোববার দুলালী বেগমের মতো আরও সাত বিধবা নারীর দেখা পান এই প্রতিনিধি। যারা দীর্ঘ দিন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ভাতার কার্ড পাননি বলে জানান।
বিষয়টি জানানো হয় সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায়কে। তিনি লাইভ শুরু আগেই এই সাত জনের ভাতা কার্ড দেয়ার আশ্বাস দেন। এ কথা শুনে আদর্শ গ্রামে শুরু হয় আনন্দ। কার্ড পাবেন এটা শুনে কেঁদেও ফেলেন কয়েকজন।
দুলালীর মতো এই সাত বিধবা নারী কার্ড পেলে প্রতি তিন মাস অন্তর দেড় হাজার করে টাকা পাবেন। এই টাকা সরাসরি চলে যাবে তাদের মোবাইল ফোনে। এতে অনেকটাই কষ্ট লাঘব হবে এসব বিধবার।
সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায় বলেন, ‘গণমাধ্যমে খবর দেখে দুলালী বেগমের মানবেতর জীবনযাপনের খোঁজ-খবর নিয়েছি। সকালে নতুন ঘরের চাবি হস্তান্তরের সময় ঘরের সঙ্গে তাকে বিধবা ভাতার কার্ড দেয়া হয়।
‘রোববার লাইভ অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু ট্রেনিংয়ে থাকায় যুক্ত হতে পারিনি। তবে প্রোগ্রামটি দেখে আদর্শ গ্রামের আরও সাত বিধবার তথ্য পেলাম। দ্রুত এই সাত নারীকে কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।’
শনিবার গাইবান্ধার সাত উপজেলার অসহায় ও ভূমিহীন আট শতাধিক পরিবারকে ‘স্বপ্ননীড়’ ঘরের চাবি ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়। এদের অধিকাংশই ভূমিহীন, বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা ও হতদরিদ্র মানুষ।
সাদুল্লাপুরের আদর্শ গ্রামে এসব ঘর ও জমি পেয়েছে ৩১টি পরিবার। গ্রামের সাত বিধবা নারী, যারা ভাতা কার্ড পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা হলেন, আবেদা, আমিনা, আজেদা, নিলা দেবী, মিনারা, কমেলা ও আনজুয়ারা বেগম।
এদের মধ্যে নিলা দেবী বলেন, ‘কার্ডের জন্যি কনটে কনটে গেছনু; কেউ কার্ড দেয়নি। মোর খুব দুঃখ বাবা। কার্ড হলি ভাল থাকপের পাম।’
মিনারা বেগম বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বর টেকা না দিলি কার্ড দেয় না। হামরা টেকা কনটে পামো। তোমরা যদিল কার্ড দেন বাবা; তাইলে দুঃখ শেষ হবি হামার।’