সুনামগঞ্জ সদরের বিরামপুর এলাকায় গৃহহীন ৩০টি পরিবার সরকারের উপহারের ঘর পেয়ে এক দিকে আপ্লুত, অন্যদিকে উৎকণ্ঠায়।
ঘরগুলো বানানো হয়েছে সুরমা নদীর তীরে। উঁচু করার জন্য যে মাটি ব্যবহার হয়েছে, সেগুলো বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কি না, এ নিয়ে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে গুচ্ছগ্রাম-২ পর্যায়ে (সিভিআরপি) প্রকল্পের অধীনে। গত ১৬ ডিসেম্বর এগুলো উদ্বোধন কর হয়। সেদিনই ঘর পান বেগম বিবি।
স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন পার করেছেন সদর উপজেলার রঙ্গাচর ইউনিয়নের ৬০ বছর বয়সী এই নারী।
বিরামপুর গ্রামে মানুষের বারান্দায়, দোকানের সমানের জায়গায় দিন কাটত তার। সেই কষ্টের জীবনের অবসান ঘটল এবার।
নিজের জীবনের কষ্টের দিনগুলোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার লাগি দোয়া করি। তাইন আমারে থাকার ঘর দিছুইন। আমরা চাই তাইন যেন সবসময় আমরার পাশে থাকুইন।’
ঘর পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দুধমালাও। তিন ছেলে নিয়ে এখন অন্তত থাকার কষ্ট কমল তার।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমরারে ঘর দিয়া অনেক বড় উপকার করছেন তা আমরা কোনোদিন ভুলতাম না। আমার ছেলে তিনটা একটা দোকান দিসে কষ্ট করি এবং প্রধানমন্ত্রী আমার মতো ভূমিহীনদের মধ্যে ঘর দিছুইন এইটা কোনো সরকার করছে না। আমরা তাইনের (তাঁর) সঙ্গে সবসময় আছি।’
সদর উপজেলার রঙ্গাচর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামে পেয়েছে ৩০টি পরিবার। তবে ঘরগুলো করা হয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকায়। এগুলো বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার ভয় আছে।
বাড়ি উঁচু করতে যে মাটি ভরাট করা হয়েছে, সেটি সরে যাচ্ছে এরই মধ্যে। উপকারভোগীরা বলছেন, বৃষ্টির দিন আর বন্যা হলে মাটি সরে গেলে ঘরের ক্ষতি হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়েছেন ৭০ বছর বয়সী আমেনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মেয়েটারে নিয়া যে মাথা গোঁজার ঠাঁই হইছে। আল্লাহ শেখ হাসিনারে হায়াত দেওক। কিন্তু বাবা ঘর নদীর লগে। মেঘ বাদলের দিন আইলে বালু মাটি সব নিবগি ছাফ করি। আমরা এখন তো শান্তিতে থাকতে পাররাম। কিন্তু বৃষ্টির দিন কী অইব?’
বাড়িগুলোতে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি বলে জানালেন উপকারভোগী আব্দুল জলিল।
তিনিও বলেন, ‘এক সময় মাথা রাখার জায়গা আছিল না। এখন আছে আমরা বেশি কিচ্ছু আর চাই না। শুধু কারেন্ট আর নদীর তীর ভরাট চাই, যেন বন্যায় আমরা ঘরের কোনো ক্ষতি না হয়।’
এসব উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন, ‘আমরা তাদের দ্রুতই বিদ্যুৎ দেয়ার ব্যবস্থা করব। বন্যার যে বিষয়টি এসেছে, সেখানে পানি উঠে না তবুও যদি কোন রকম পরিস্থিতি তৈরি হয় আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেব।’
বিরামপুর এলাকায় গৃহহীন ৩০টি পরিবার পেয়েছে সরকারের উপহারের ঘর
জেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে গৃহহীনদের জন্য আরও মোট তিন হাজার ৯০৮টি ঘর তৈরি করা হচ্ছে। শনিবার এর মধ্যে ৪০৭টি ঘরের চাবি বিতরণ করা হয় উপকারভোগীদের মধ্যে।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫০টি, তাহিরপুরে ২৫টি, জগন্নাথপুরে ২৩টি, বিশ্বম্ভরপুরে ৩০টি, ধর্মপাশায় ৩৪টি, দিরাইয়ে ৪০টি, শাল্লায় ১৬০টি, ছাতকে ১০টি, দোয়ারাবাজারে ১০টি, জামালগঞ্জে ২৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এগুলোর চাবি ও কাগজপত্র উপকারভোগীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোর কাজ শেষ হবে এবং তাদের সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে।’