‘আল্লা অদের বিচার করব, যাগো লাইগ্যা আমার পোলাই মরছে। আমার সব শ্যাষ, আমার পরিবার শ্যাষ’ এই বিলাপ করেই আহাজারি করছেন নিহত মাসুম মিয়ার মা মাসুমা বেগম।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের চার জন নিহত হয়েছেন। মৃতরা হলেন মাসুম মিয়া, তার প্রতিবন্ধী স্ত্রী সিমা বেগম, ছেলে রাসেল ও রহমতুল্লা।
এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস পাঁচ সদস্যের ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বাবা, মা ও দুই ভাইকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বড় মেয়েও। শ্বশুরবাড়িতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
প্রতিবন্ধী দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের জায়গায় বাস করত মাসুম। রাসেল ও রহমতুল্লাহ নামে তার দুই ছেলে ছিল মানসিক প্রতিবন্ধী। স্ত্রী সিমা বেগমও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।
মাসুম মিয়ার পরিবার। ছবি: নিউজবাংলা
পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার উদ্দীপন ভক্ত নিউজবাংলাকে জানান, পূর্বাচল উপশহরের ১১ সেক্টরের কুমারটেক এলাকায় ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) অতিমাত্রার ভোল্টেজের তার ছিঁড়ে পল্লী বিদ্যুতের তারের ওপর পড়ে। পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে মাসুমের টিনের ঘরের চালের ওপর পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে টিনের ঘর বিদ্যুতায়িত হয়ে আগুন ধরে যায়।
নিহত মাসুমের মামা নুর হোসেন জানান, রিকশা চালিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালতো মাসুম। বড় ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো যাতে পানিতে যেতে না পারে।
নিহত সিমার বাবা আবদুস সামাদ জানান, এত ভোল্টের তারের নিচে আরেকটি তার কীভাবে থাকে জানতে চান তিনি। এ ঘটনায় কারও অবহেলা থাকলে তাদের বিচারও দাবি করেন।
পল্লী বিদ্যুতের রূপগঞ্জের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, চার জন নিহতের ঘটনায় পল্লী বিদ্যু বিভাগ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে। এ বিভাগের কোন অবহেলা আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির জানান, চার জন নিহতের ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। যদি তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কারও বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ দেয়া হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি।