পাবনা সদর উপজেলার চরআশুতোষপুরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়া বিধবা রাশিদা খাতুন ভিক্ষে করে দিন চালান। ৭০ বছর বয়সী এই নারীর জগত সংসারে আর কেউ নেই। মাসে আয় এক হাজার টাকা। পলিথিনে মোড়ানো খুপড়ি ঘরে বসবাস করেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে এবার সে একটি পাকাঘর পাচ্ছে। এজন্য তার আনন্দের শেষ নেই।
রাশিদা খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিল্ডিং ঘরে থাকমু জীবনে স্বপ্নও দেহি নাই; মুজিবের বেটি আমগোরে বিল্ডিং ঘর দিব চিন্তাও করি নাই। আল্লাহ তাকে হায়াত দারাজ করুন।’
রাশিদা খাতুনের মতো এলাকার মমতাজ বেগম, সামেলা খাতুন, মর্জিনা খাতুন, বিধবা ইয়াসমিন খাতুন, বাছিরুন বেওয়া, তজেম আলী, সামু মন্ডলসহ অনেকেই আছেন একই আনন্দে, যারা মুজিব জন্মশতবর্ষে পাচ্ছেন ‘স্বপ্নের নীড়’।
‘আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার’ এ স্লোগান সামনে রেখে মুজিব জন্মশতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সারা দেশের মতো পাবনার ১ হাজার ৮৬ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পাচ্ছেন ‘স্বপ্নের নীড়’।
প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে (প্রত্যেকটি বাড়ি ১ লাখ ৭১ হাজার ৪০০ টাকা) মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রথম পর্যায় গৃহহীনদের মাঝে দুই শতক জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামী শনিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর করবেন। পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মোখলেছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাবনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে পাবনা জেলার ৯ উপজেলার ১ হাজার ৮৬টি গৃহহীন পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকাঘর পাবে। এগুলো ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং রঙিন টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি দুই কক্ষের আবাসন। সঙ্গে থাকছে সামনে খোলা বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও টয়লেট।
ঘরগুলো যাতে টেকসই এবং মানসম্মত হয় সেজন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মনিটরিং কমিটি নিয়মিত তদারকি করছে। ঘরগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্য়ায়ে।
পাবনা সদর উপজেলার ৪৪৯টি, সাথিঁয়ার ৩৭২টি, আটঘরিয়ার ৮৫টি, ফরিদপুরের ৫০টি, ঈশ্বরদীর ৫০টি, চাটমোহরের ৩০টি, সুজানগরের ২০টি, বেড়ার ২০টি এবং ভাঙ্গুড়ার ১০টি পরিবার পাবে এই স্বপ্নের নীড়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে গৃহহীনদের এ সব ঘর দেয়া হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। এ ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই কার্যক্রম। প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনরাই পাবেন ঘরগুলো। এর ফলে পরিবারগুলো পাবে সামাজিক মর্যাদা ও নতুন ঠিকানা।’
তিনি জানান, কেউ যাতে ঘর বরাদ্দে কোনো ধরনের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা না নিতে পারে সে জন্য সঠিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে। কাজের মান শতভাগ ঠিক রাখতে প্রতিনিয়ত তদারকি করা হচ্ছে।