জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গাইবান্ধার সাত উপজেলার অসহায় ভূমিহীন আট শতাধিক পরিবারের মাঝে একটি করে সেমিপাকা টিনের নতুন ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
নির্মাণ শেষ হলে চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ঘরের চাবি ও দলিল উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসক।
সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ‘জমি আছে, ঘর নেই’ প্রকল্পের এসব বিনা মূল্যে ঘরে নিশ্চিন্তে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে দারুণ খুশি আশ্রয়হীন পরিবারগুলো। জেলার প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের প্রকৃত সুবিধাভোগীদের এই প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের টিয়াগাছা গ্রামের হতদরিদ্র দুলালী বেওয়ার স্বামী মারা গেছে ৩০ বছর আগে । এরপর থেকে কখনো রোদে পুড়ে, কখনো বৃষ্টিতে ভিজে জরাজীর্ণ চালহীন ছনের ঘরে কোন রকমে দিন কাটছিল এই বৃদ্ধার। তবে হঠাৎ করেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ইটের সেমিপাকা টিনের ঘর আশীর্বাদ হয়ে আসে তার কাছে। জীবনের শেষ বয়সে এসে আদর্শ পাড়ায় পাঁকা ঘরে নিশ্চিন্তে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে দারুণ খুশি বৃদ্ধা দুলালী বেওয়া।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে যেটি (যেখানে) আছিনো (ছিলাম) সেটি মানষে ঘর-দুয়ের ভাঙ্গি দিছি। এখন এটি (এখানে) মেম্বার ঘর তুলি দিছি। যতদিন বাঁচি আছম (থাকা) এটি থাকিম।’
উত্তর ভাতগ্রামে ছনের ঘরে বসবাস করা কমেলা বেওয়ার ঠাঁই হয়েছে এই আদর্শ গ্রামে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এতদিন এনা (একটি) ছাপড়া ঘরে আশ্রয় নিছিনো। আল্লার কি হুকুম এটি ঘর-দুয়ার হয়া (হওয়া) গেছি (যাওয়া)। এত আশমান জমিন খুশি হচি আমরা।’
তিনি বলেন,‘ডিসি হামাগরে খোঁজ নিয়ে যায়। থানা থাকি ওসি-ডিসি, মেম্বর-চেয়ারম্যান হামার (আমাদের) খোঁজ খবর নিয়ে যায়। আমরা এখন অনেক ভাল আছি বাবা। খাই না খাই এই ঘরের তলত (নিচে) পড়ি থাকমো (থাকা) এখন।’
শুধু দুলালী আর কমেলা বেওয়া নয়। তাদের মতো খুশিতে আত্মহারা সাদুল্লাপুর উপজেলার ঘর পাওয়া বিধবা, হতদরিদ্র ও গৃহহীন ১৭৯টি পরিবার। এর মধ্যে শুধু ভাতগ্রাম ইউনিয়নের আর্দশ পাড়ায় ঠাঁই হয়েছে অন্তত ৩০টি ভূমিহীন পরিবারের।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় প্রকৃত দরিদ্র ও অসহায়দের অন্তভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যাচাই-বাছাই করে বিধবা, ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী শ্রেণিভুক্ত ভূমিহীন উপকারভোগী নির্বাচন করা হয়। ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে ভূমিহীনদের এসব ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে জেলার সাত উপজেলার ৮৪৬টি দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের বাসস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। গৃহহীন পরিবারের মানুষদের জন্য এসব ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। আশা করা যায়, চলতি মাসেই এসব ঘরের চাবি ও দলিল আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হস্তান্তর করা হবে।’
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ‘জমি আছে, ঘর নেই’ প্রকল্পে দুই কক্ষ বিশিষ্ট আধা পাকা প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।