করোনায় শুধু চট্টগ্রামেই চাকরি হারিয়েছেন ২২ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক। বন্দরনগরীতে এসব শ্রমিক ৪৭টি কারখানায় কাজ করতেন। সময়টিতে যারা কাজে টিকে ছিলেন, তাদের বেতন দেয়া হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ তারা পুরো বেতন পাননি।
বুধবার সকালে নগরীর এক রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে খাতটির ১৩টি শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত ‘বিলস লেবার রিসোর্স অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার’ এসব তথ্য জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি তপন দত্ত লিখিত বক্তব্য পড়েন।
বক্তব্যে তিনি বলেন, চট্টগ্রামেই ৪৭টি পোশাক কারখানায় ২২ হাজার শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। যারা শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। যারা চাকরি করছেন তাদের বেতন দেয়া হয়েছে ৬০-৬৫ শতাংশ। করোনাভাইরাসের প্রকোপ নতুন বছরেও চলমান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভাইরাসটির প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান। দেশে স্বল্প দিনের লকডাউনের সুযোগ নিয়ে দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি পোশাক খাতে শ্রমিকদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মহামারির প্রথম দিকে তৈরি পোশাক রপ্তানির আদেশ কমলেও পরিস্থিতির উন্নতিতে তা বেড়ে যায়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আবারও সংক্রমণ বাড়ায় রপ্তানি আদেশ কমার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের অজুহাতে গার্মেন্টস মালিকরা দুই ও চার শতাংশ সুদে দুই দফায় ১০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা পেয়েছে। তবুও আইনসঙ্গত পাওনা না দিয়ে মালিকরা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। এরপরও তারা শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি পাঁচ শতাংশ স্থগিত রাখার বায়না করেছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণে দেশে বিভিন্ন খাতে প্রায় সাত লাখ শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
তপন দত্ত বলেন, স্বাস্থ্য খাতের শ্রমিকরা আংশিক, হোটেল, পরিবহন শ্রমিক, দোকান কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, গৃহশ্রমিক, কমিউনিটি সেন্টার ও ডেকোরেশন শ্রমিকসহ বহু শ্রমিক পুরোপুরি আয়শূন্য ছিল। কর্মহীন লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। কর্মহীন হওয়ায় দারিদ্র্য বেড়েছে ১৯ শতাংশ ও দরিদ্র জনসংখ্যা বেড়েছে ২৪ শতাংশ।
জীবনযাপনের ব্যয় করোনায় বেড়ে গেছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তপন দত্ত জানান, করোনায় কৃষকরা ফসল ফলালেও নায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে তারাও এই সময়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট ১৩টি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।