দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিনাইল গ্রামের ছেলে এ এস এম তারেক এলিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন থেকে স্নাতকোত্তর শেষে চাকরির পেছনে না ছুটে ২০১২ সালে প্রথমে গ্রামের একটি পুকুরে শুরু করেন মাছ চাষ। শুরুতেই লাভের মুখ দেখতে পাওয়ায় তিনি মাছ চাষেই মনোনিবেশ করেন।
নিজের পুকুরের পাশাপাশি ভাড়ায় ১৩টি পুকুর নিয়ে তাজ অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শুরুতে রুই, কাতলা, মৃগেল ছাড়াও বিভিন্ন কার্প জাতীয় দেশি-বিদেশি মাছের মিশ্র চাষ করে চমক দেখান তিনি। তবে দেশীয় জাতের চিতল মাছ চাষে তিনি বেশি সফল হয়েছেন।
তারেক বলেন, ‘বিদেশি বিভিন্ন জাতের মাছের ভিড়ে আমাদের দেশীয় মাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। টেংড়া, পুঁটি, শিং, মাগুর, কাজলি, চ্যাং, টাকি, শোল, বোয়াল, চিতলসহ দেশীয় এসব মাছের স্বাদ ও পুষ্টি বিদেশি মাছের চেয়ে অনেক বেশি।’
দেশের বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত দুই বছর ধরে তারেক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিতল মাছ চাষ করছেন। এ মাছ চাষে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মিশ্র মাছের মধ্যেই এ মাছ চাষ করা যায়। পানির সব স্তরেই এই মাছ ভাসমান থাকে বলে প্রাকৃতিক ও সরবরাহ করা খাবার খেয়ে অন্যান্য বিদেশি মাছের মতোই অল্প দিনের মধ্যেই চিতল মাছ প্রায় ৪-৫ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। গত দুই বছর এই মাছ চাষ করে তিনি প্রায় ৮ লাখ টাকার মতো লাভ করেছেন।
বিরামপুর উপজেলার মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল জানান, তিনি তারেকের পুকুরের তিন থেকে চার কেজি ওজনের চিতল মাছ পাইকারি দরে প্রতি কেজি ৪৫০ টাকায় কিনে ৫৫০ টাকায় বিক্রি করেন। বাজারে চাহিদার তুলনায় চিতল মাছ সরবরাহ কম থাকায় তিনি সব ক্রেতাকে খুশি করতে পারেন না।
সফল মাছ চাষি এ এস এম তারেক এলিনমাছ চাষের পাশাপাশি বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে তারেকের তাজ অ্যাগ্রো ফার্মে। বর্তমানে প্রায় ২০ জন যুবক এখানে মাসিক ও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করছেন।
এই ফার্মে কর্মরত কল্যাণপুর গ্রামের আবু কাশেম জনান, এখানে কাজের সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। কারণ, পারিশ্রমিক পাওয়ার পাশাপাশি মাঝে মাঝে মাছও পান তিনি।
তারেকের চিতল মাছ চাষের সফলতা দেখে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বেকার যুবকরাও এই মাছ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এদের মধ্যে বাকুন্দা গ্রামের খায়রুল আলম সবুজ, দেশমা বাজারের মেহেদী হাসান ও মুরাদ চৌধুরী, কেটরা হাটের আক্কাস আলীসহ কয়েক জন যুবক তারেকের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে চিতল মাছ চাষ শুরু করেছেন।
দিনাজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. এএসএম রেজাউল করিম হান্নান নিউজবাংলাকে জানান, তারা বিলুপ্ত প্রায় চিতল মাছসহ সব ধরনের দেশীয় মাছ পুনরুদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সে লক্ষ্যে কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে চিতল মাছের চাষ খুব সহজ হওয়ায় জেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে মৎস্য চাষিদের নানা সহযোগিতা করছেন। আর এরই মধ্যে জেলা মৎস্য বিভাগের সহায়তায় তারেক চিতল মাছ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন।
এলিন জানান, চিতল মাছের জন্য আলাদা চিতল খামার গড়ে তোলার পর আগামীতে দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় সব ধরনের মাছ চাষ ও সংরক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে তার। আর এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।