শীত নিবারণ করতে গিয়ে পৌনে দুই মাসে রংপুর অঞ্চলে ৭৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ছয়জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে পাঠাতে হয়েছে সাতজনকে।
অগ্নিদগ্ধ ৭৫ জনের মধ্যে ৪২ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। ১৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার পর্যন্ত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২০ জন।
ইউনিটের প্রধান ডা. আব্দুল হামিদ পলাশ নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে বার্ন ইউনিটে স্যালাইন সঙ্কট চলছে। বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে তাদের।
এ প্রসঙ্গে বার্ন ইউনিটের প্রধান পলাশ বলেন, ‘ইউনিটে ভর্তি প্রত্যেক রোগীর প্রতিদিন কমপক্ষে চারটি করে স্যালাইন প্রয়োজন। এবার রোগী বেশি। তাই একটু সঙ্কট রয়েছে। বিষয়টি আমরা হাসপাতালের পরিচালক স্যারকে জানিয়েছি।’
আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়ার রোগীদের সম্পর্কে তিনি জানান, ডিসেম্বরে একজন মারা গেলেও জানুয়ারির এই কদিনে মারা গেছেন পাঁচজন। তাদের প্রত্যেকেই ৪০ শতাংকের উপর দগ্ধ হয়েছিলেন। যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহতরা হলেন রংপুরের পীরগাছার লিমা বেগম (২০), লিজা বেগম মুক্তা (২৫), লালমনিরহাটের আদিতমারীর মোকলেছার রহমান (৪০), সদর উপজেলার খেজমতি বেগম (৬০) ও মতি রানী (৫০) এবং নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মোরশেদা বেগম (৪০)।
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ৫০ বছর বয়সী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আকবর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হামার নীলফামারীত এবার খুব শীত। ঠান্ডা লাগার কারণে হামার বাবা বাড়ির পেছনোত আগুন তাপাচ্ছিল।
‘হোঠাৎ কেমন করি আগুন লাগলো কেউ কবার পাওছে না। পরে হাসপাতালোত নিয়ে আসি চিকিৎসা করাচ্ছি। এলা একটু ভালো আছে। ওষুধপাতি, স্যালাইন ট্যালাইন সব বাইরে থেকে কেনা নাগোছে। মেলা টাকাও নাগছে।’
অগ্নিধগ্ধ মেঘলার নানী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমার নাতিন কীভাবে পোড়া গেছে জানি না। গোসল করি ছাদে গেছে ওইদ (রোদ) তাপার জন্য। সেখানে কাগজে আগুন নাগে দিয়া তাপপার ধরছে। সেই আগুন গাত নাগলে আগুন ধরি যায়।
‘পরে হামরা শুক্রবার হাসপাতালোত নিয়ে আসি। ওষুধ নেকি দেয় সেই ওষুধ বাইরে থাকি আনি। আজ (মঙ্গলবার) সকালেও স্যালাইন বাইরে থাকি আনছি।’
বার্ন ইউনিট সূত্র জানিয়েছে, এ ইউনিটে ভর্তি রোগীর জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বছরে আড়াই লাখ টাকা এবং চিকিৎসকরা ব্যক্তিগতভাবে গরীব রোগিদের জন্য একটি ফান্ডে ৫০ হাজার টাকা দেন। সেই টাকা শেষ হয়ে গেছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে স্যালাইন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তবে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আব্দুল মোকাদ্দেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্যালাইন সংকট নিয়ে রোগীদের পক্ষ থেকে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি বা কেউ করেওনি। তবে, এখন আমাদের কাছে পর্যাপ্ত স্যালাইন নেই।
‘কিন্তু এমন নয় যে ইমার্জেন্সি যেখানে স্যালাইন দেয়ার প্রয়োজন সেখানে দিতে পারব না। ইমার্জেন্সি স্যালাইন দেয়ার মতো মজুত আছে। আমরা চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি ঢাকায়। হয়তো দ্রুত স্যালাইন পেয়ে যাব।’