বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘শ্যাষ বইসে নতুন গরে শান্তিত মরবার চাই’

  •    
  • ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ ২০:২৮

‘হামরা নদী ভাঙা মানুষ। পেত্তেক বছর আঙ্গর গর বাড়ি নদীতে ভাঙ্গে। আঙ্গর এই দুনিয়াতে কিচ্ছু নাই। একডা গরের নাইগে কতোহানে গেছি। কেউ এডা গর দেই নাই। আফনারা আঙ্গরে এডা গর দেন। শ্যাষ বইসে (বয়সে) নতুন গরে শান্তিত মরবার চাই।’

‘শেখ হাসিনা বলে গর (ঘর) দিবান নাকছে (দিচ্ছে)। হামরা গরীব মানুষ। আমরা এহন কুঠায় থাহি? বান্দের মধ্যে পইরে আছি, আঙ্গর কষ্ট না? আইতে (রাতে) দিনে দশ জনের মুক দেহান নাগে। এডা (একটা) গর দিলে হামরা ছুয়াল পুয়াল নে (ছেলেমেয়ে নিয়ে) থাকবার পাইলামনি।’

একটি ঘরের জন্য এমন আকুতি কুলকান্দি বাঁধে আশ্রয় নেয়া ৭৫ বছরের বৃদ্ধা সাহারা খাতুনের।

নিউজবাংলাকে তিনি আরও বলেন, ‘হামরা নদী ভাঙা মানুষ। পেত্তেক বছর আঙ্গর গর বাড়ি নদীতে ভাঙ্গে। আঙ্গর এই দুনিয়াতে কিচ্ছু নাই। একডা গরের নাইগে কতোহানে গেছি। কেউ এডা গর দেই নাই। আফনারা আঙ্গরে এডা গর দেন। শ্যাষ বইসে (বয়সে) নতুন গরে শান্তিত মরবার চাই।’

শুধু সাহারা খাতুন নন, নদী ভাঙনের শিকার তার মতো কয়েকশ মানুষ জামালপুরের ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জে যমুনা তীররক্ষা বাঁধ ও বিভিন্ন সড়কে আশ্রয় নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছে।

বাস্তুহারা এসব পরিবার বাঁধে-সড়কে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে বছরের পর বছর মানবেতর জীবনযাপন করলেও তাদের জন্য স্থায়ী আবাসনের উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।

জেলার ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি, মরাডুবি, সিরাজাবাদ, পার্থশী, উলিয়ায় যমুনা তীর রক্ষা বাঁধ এবং দেওয়ানগঞ্জের চিকাজনী-মণ্ডল বাজার সড়কে বসবাস যমুনার ভাঙনে সব হারানো এসব মানুষের। মাথা গোঁজার কোনোরকম একটা ব্যবস্থা করলেও তাদের নেই নিরাপদ খাবারের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা। সরকারের মানবিক সহায়তা থেকেও বঞ্চিত তারা।

কুলকান্দি বাঁধে আশ্রয় নেয়া আব্দুল খালেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নদী ভাইঙ্গে আঙ্গর সর্বনাশ করে ফালাইছে। নিঃস্ব কইরে ফালাইছে। হামরা এহনকা (এখন) বাঁধের উপর আছি এক দেড়শ ঘর।’

তার স্ত্রী জেলেহা বেগম বলেন, ‘হামরা অস্থায়ীর (অস্থায়ী বাঁধ) মইধ্যে আছি নদী ভাইঙ্গে। আঙ্গরে ঘর একডা। হামরা ছাগল-গরু নিয়ে এক ঘরের মইধ্যেই কষ্ট কইরে আছি। আঙ্গরে স্থায়ী জায়গা ভাইঙ্গে নিয়ে গেছে গা। আঙ্গরে কিছুই নাই এহনকা।’

ওই বাঁধেই আশ্রয় নেয়া জবেদা বেগম জানান, তিনি প্রায় ৮ মাস ধরে ওই বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের ওখানে কোনো শৌচাগার নেই। এ কারণে নারীরা খুবই কষ্টে আছেন। খাবার পানিও আনতে হয় অনেক দূর থেকে।

বেঙ্গু মিয়া নামের আরেকজন নিউজবাংলাকে বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার ঘর দিচ্ছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। তাদের একটি ঘর দিলে খুব ভালো হতো। শেষ বয়সে ওই ঘরে শান্তিতে মরতে পারতেন।

এ বিষয়ে জামালপুরের মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম নিউজবাংলাকে জানান, বাঁধে আশ্রয় নেয়া শতাধিক পরিবার বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের অভাবে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এখানে বসবাসকারীরা মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত।

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাজহারুল ইসলাম জানান, যমুনা-ব্রহ্মপুত্রবেষ্ঠিত ইসলামপুর উপজেলায় প্রতি বছর বন্যা ও নদী ভাঙনে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। যেসব পরিবার এখনও প্রকল্পের বাইরে রয়েছে, পর্যায়ক্রমের তাদের আবাসনের ব্যবস্থাও করা হবে।

জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী জানান, গত অর্থবছর জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৮৬২টি ঘর নির্মাণের পর হস্তান্তর করা হয়। চলতি অর্থবছরে এক হাজার ৪৭৮টি ঘরের নির্মাণকাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে কিছু দিনের মধ্যেই এ কাজ শেষ হবে।

তিনি আরও জানান, বাঁধে বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিরা যদি ভূমিহীন অথবা ১০ শতাংশ জমির মালিক হয়, তাহলে তাদেরকে ঘর দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। আর এর বেশি জমি থাকলে ঘর দেয়া হবে না।

এ বিভাগের আরো খবর