নোয়াখালীর হাতিয়ায় বিবস্ত্র করে নির্যাতনের নতুন একটি ভিডিও ভাইরাল এবং এক গৃহবধূর মামলার পর পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগী একজন পুরুষ। তিনি নারী নন।
এই ঘটনায় স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসক ১১ জনকে আসামি করে রোববার রাতে হাতিয়া থানায় আরও একটি মামলা করেছেন।
ওই চিকিৎসক হাতিয়ার ২নং চানন্দী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা।
সোমবার পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, মামলার পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরা হলেন, প্রকাশ জিহাদ, ফারুক হোসেন, আলমগীর মাঝি, আবু তাহের ও নবীর উদ্দিন।
এদের সবার বাড়ি হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নে।
গত ৫ জানুয়ারি নোয়াখালীর নারী-শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল- ২ এ ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করেন এক নারী।
এতে বলা হয়, হাতিয়া উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নের আদর্শগ্রামে নিজ ঘরে তাকে সন্তানদের সামনে বেদম মারধর করে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল গৃহবধূর ঘর দেখানো হলেও গণমাধ্যম কর্মীদেরকে ভুক্তভোগী নারী জানান, তাকে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের বাড়ির সামনে নির্যাতন করা হয়।
এ ঘটনার মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যাক্তি একজন লোককে নির্যাতন করে টেনে হেঁচড়ে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
এতে দেখা যায়, একজন লাঠি দিয়ে ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করছেন। এ সময় নারীর চিৎকারের কণ্ঠ শোনা যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি নারীর বলে লেখা হয়।
বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসলে রোববার সন্ধ্যায় হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নে যান নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি জানান, ‘একজন পুরুষকে নির্যাতন করছে কয়েকজন ব্যক্তি, কোনো নারীর নয়। তবে ভিডিওতে একজন নারীর চিৎকারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।’
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী থেকে অন্তত ৬০ কিলোমিটার দূরে এবং হাতিয়ার উপজেলা সদর থেকে নদী পার হয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দুরে ২নং চানন্দী ইউনিয়নের এই আদর্শ গ্রাম।
ওই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাস্থলে যান গণমাধ্যমকর্মীরা। কথা হয় সেই নারীর সঙ্গে।
স্থানীয়রা জানান, ওই গৃহবধূ এবং স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের মধ্যে মন দেয়া নেয়ার সম্পর্ক রয়েছে।
গত ১ জানুয়ারি দুই জনকে একসঙ্গে পেয়ে মারধর করে স্থানীয় কিছু লোক। পরে দুইজনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।
২নং চানন্দী ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, গৃহবধূ ও পল্লী চিকিৎসককে মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ দুই জনকে উদ্ধার করে।
গৃহবধূকে চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
পরে ওই গৃহবধূ চিকিৎসা শেষে ৫ জানুয়ারি আদালতে মামলা করেন। আর মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়েছে আদালত।
হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার গোলাম ফারুক জানান, আদালতের নির্দেশনা হাতে পাওয়ার পর গত শনিবার তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, এলাকার কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক অনৈতিক কাজের অপবাদ দিয়ে পল্লী চিকিৎসক ও একজন গৃহবধূকে মারধর করে গাছে বেঁধে রাখে। পুরুষ নির্যাতনের ঘটনাটি তারা মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়।
বিষয়টি পুলিশের নজরে আসলে রোববার তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।