বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তিস্তার চরে সবজির প্রাচুর্য

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ১৫:১৯

ভিটে মাটি হারা শত শত মানুষ এখন ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরতে শুরু করেছে তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের মানুষের ঘরে ঘরে।

আমিনুল ইসলাম। জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা এই তিস্তা নদীর কোলেই। ৪৫ বছরের জীবনে ৩০ বার নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছেন তিনি।

বাবার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি নদীতে তো গেছেই, সঙ্গে গেছে নিজের করা বসতঘর। তবু চিরশত্রু এ তিস্তা থেকে দূরে কোথাও যাননি তিনি। সব হারিয়ে পড়ে ছিলেন নদীর কোলে।

তিস্তাও তাকে বুক পেতে আশ্রয় দিয়েছে। নদীর চর হয়ে উঠেছে আশির্বাদ। ধু ধু বালুচরে ফলছে সব ধরনের ফসল।

শুধু আমিনুল ইসলাম নয়, তার মতো ভিটেমাটি হারানো শত শত মানুষ এখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। অভাবের কষ্ট কমতে শুরু করেছে ঘরে ঘরে।

লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারি এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার বিস্তীর্ণ চরে চাষিরা ফলাচ্ছেন সোনার ফসল। চরাঞ্চলে সবজির প্রাচুর্য দেখে যে কারও চোখ জুড়াবে।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপপরিচালক সরওয়ারুল আলম জানিয়েছেন, রংপুর-লালমনিরহাটের তিস্তার চরগুলোতে এবার ১৪ হাজার ৯৫৩ হেক্টর জমিতে ৩২ প্রকার ফসলের আবাদ হয়েছে।

ভিটেমাটি হারানো আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জীবনে ৩০ বের (বার) বাড়ি ভাঙচি। বাড়ি ভাঙার পর এই চরের মদ্যে আবাদ সুবেদ করি কিচু খাইচি। যকন পানি থাকে না সখন উচে উচে (উঁচু উঁচু) জাগাত আমন আবাদ নাগাই। কিচু হইলে হোইল না হোইলে নাই। পরে এই সবজি আবাদ করি। আবাদ করি বউ বাচ্চা নিয়ে এ্যালা একনা ভালো আচি। খুব কষ্টের মদ্যে কিচু আয় ব্যয়ও করচি।’

মহিপুর চরের এনামুল হক বাবু মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘আগে এই চরে ছিল বালু। এখন এই মাটিটা একটু ভালো আচে, এখানে হামরা আলু, ভুটটে, তামাক লাগাইচি। যেলা (যখন) যেটা বাজারোত আসেতেছে সেলা (তখন) সেটা ব্যাচপার (বেচতে) পওাচি (পারছি)। ছয় মাস চর হয়, ছয় মাস পানি থাকে। ছয় মাসের আবাদ দিয়া সারা বচর চলি।’

তিনি বলেন, ‘কামলা দেয়ার জন্য আগোত বাইরে যাওয়া লাগতো এ্যালা আর নাগে না। চরে আবাদ করলে এটা দিয়েই চলে। আগে ঢাকা, কুমিল্লা-টুমিল্লা যাইতাম। নানান ধরনের কাজ করি জীবন বাঁচাতাম। এখন আর ওটা করা লাগে না।’

এখন চরের ৯০ ভাগ জমিতে আবাদ হয় জানিয়ে কৃষক তাহের লিটন বলেন, ‘চরের জমির বালুকোনা করলে চাষ ফলবে সোনা। আমরা এখন সেই সোনাই ফলাচ্ছি। আগে আমাদেক বলা হতো দুর্ভিক্ষের এলাকার মানুষ। অনেক উন্নয়ন হয়েছে।’

তিস্তা বালু চরে পেঁয়াজ ক্ষেতে কাজ করা হাজেরা বেগম জানান, ‘চরে ভুট্টা, বাদাম, মরিচ আর পেঁয়াজ আবাদ করছি। আবাদ ভালো হইচে। তাই যেলা পানি নামি যায় সেলা সব্জি চাষ করি।’

নোহালী চরের আব্দুর কাইয়ুম জানান, তিনি ছয় বিঘা জমিতে শীতকালীন শাকসবজি হিসেবে কপি ও বেগুন চাষ করছেন। সবজি চাষে যদি সরকার ঋণ দেয় তাহলে তারা আরও উপকৃত হবেন।

গঙ্গাচড়া উপজেলার পাঁচ নম্বর লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘চর এক সময় ধু ধু মরুভূমি ছিল। সেই চরে কৃষকরা যেভাবে ফসল ফলাচ্ছেন তা বিস্ময় তৈরি করেছে। কৃষকদের এটা বড় সাফল্য। সে কারণে আমাদের কৃষি বিভাগের উচিত এই চর ও চরের আবাদ নিয়ে একটু চিন্তা করা যাতে করে এই ফসলগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো যায়।’

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি কর্মকর্তা খোন্দকার মেসবাহুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চলছে আবাদের প্রদর্শনী। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে চাষিদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর