নাটোরে এক এনজিও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাত ও কর্মীদের বেতন না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
১১ জানুয়ারি রাতে রাকিব হাসান নামে এক কর্মী চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগ এনে ইমতিয়াজ আজীম সৌরভ ও তার সহযোগী ডা. আবু সালেহকে আসামি করে নাটোর সদর থানায় মামলা করেন।
ইমতিয়াজ আজীম সৌরভ নাটোর শহরের আলাইপুর এলাকার বাসিন্দা।
ভুক্তভোগীদের এক জন জানান, গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সৌরভ স্থানীয় একটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন আজীম। এতে বলা হয়, ‘কমিউনিটি সেইফ হেলথ পাইলট’ নামে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার একটি প্রকল্পে গ্রাম্য ডাক্তার ও কমিউনিটি অফিসার নিয়োগ দেয়া হবে।
প্রকল্পের কাজ হিসাবে বলা হয়, নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে গরীব অসহায় মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। তাতে ১১ থেকে ১৬ হাজার টাকা বেতনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি দেখে চাকরি প্রত্যাশী ১১০ তরুণ-তরুণী প্রাথমিক জামানত হিসাবে প্রত্যেকে তিন হাজার ৩৫০ টাকা করে সৌরভকে দেন।
পরে ১৪ জন জামানতের টাকা ফেরত নিয়ে চলে গেলে কর্মী সংখ্যা হয় ৯৬ জন। তখন থেকে ট্রেনিং, সেমিনারসহ নানা বিষয়ে কেটে যায় আরও কয়েক মাস। গত সেপ্টেম্বরে কমিউনিটি অফিসার ও গ্রাম্য ডাক্তার হিসাবে কর্মীদের মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়।
কর্মীদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য সেবার নানা প্রলোভন দেখিয়ে একশ থেকে দেড়শ টাকার সদস্য ফরম পূরণ করিয়ে নেন সৌরভ। নভেম্বর-ডিসেম্বর দুই মাস দায়িত্ব পালন করলেও কোনো বেতন পায়নি কর্মীরা।
এক পর্যায়ে সৌরভ সবাইকে ১০ জানুয়ারি বেতন দেয়ার কথা বলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে হাজির হতে বলেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে সৌরভের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তার বাড়ি ঘেরাও করে কর্মীরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
বাড়ি ঘেরাওয়ের খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র নিয়ে থানায় হাজির হন সৌরভ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে বাড়ি ঘেরাওয়ের কারণ হিসাবে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে কর্মীদের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেন তিনি।
পরে থানা থেকে সটকে পড়েন সৌরভ। সেই রাতেই তিনি ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করেন কর্মী রাকিব হাসান ও বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে। লাইভে তিনি জামানতের টাকা ফেরত দেবার কথাও বলেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপেই বিষয়টির সামাধান হবে বলে জানান তিনি।
মিতু খাতুন নামে এক কর্মী বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমরা জামানতের টাকা দিয়েছি। শুধু তাই নয়, আমরা খেয়ে না খেয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছি। বেতন আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি বলে সৌরভ আমাদের সঙ্গে চরম প্রতারণা করেছে। আমরা পুলিশ প্রশাসন, র্যাব এবং জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
নাটোরের সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান জানান, ‘কমিউনিটি সেইফ হেলথ পাইলট’ নামে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালানোর কোনো তথ্য জেলা সিভিল সার্জন অফিসে নেই।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা জানান, স্বাস্থ্যসেবার নামে কথিত একটি প্রকল্পে সৌরভ নামে এক ব্যক্তি শতাধিক তরুণ তরুণীকে চাকরি দেয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।