বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১০ জানুয়ারি, ২০২১ ২১:৩০

লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের ইছামতী বিলের আয়তন প্রায় দেড় হাজার একর। জেলার সবচেয়ে বড় বিল এটি। সারা বছরই এই বিলে মাঝখানে পানি জমে থাকে। সেখানে কোনো ফসল হয় না। তবে পানি কমতে থাকলে কোমর পানি থাকে সেখানে। তখন আশপাশের ছয়টি গ্রামের মানুষ মাছ ধরতে উৎসবে মেতে ওঠে। গ্রামের মাতবরেরা বৈঠক করে মাছ ধরার দিন ঠিক করেন।

দেশি প্রজাতির মাছের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত নড়াইল জেলায় শুরু হয়েছে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব। শীতকালে খাল-বিলের পানি কমে যায়। পলো দিয়ে মাছ ধরার এই তো ‍অনুকূল সময়। গ্রামের মাতবররা দিনক্ষণ ঠিক করেন। এরপর কয়েক গ্রামের শত শত মানুষ দলবেঁধে নেমে যান পানিতে। তাদের পলোর নিচে ধরা পড়ে নানা জাতের মাছ।

এই জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে মধুমতী, নবগঙ্গা, চিত্রা ও কাজলা নদী। নদী তীরবর্তী খালে-বিলে মিঠা পানি প্রবাহিত হওয়ায় দেশি প্রজাতির মাছের প্রজনন ভালো হয়। জেলায় বড় ধরনের বিলের মধ্যে রয়েছে ইছামতী বিল, চাচুড়ির বিল, কাড়ার বিল ও নলামারার বিল। এ ছাড়া অসংখ্য ছোট ছোট বিল আছে।

বিলের পানি শুকানো শুরু করলে এলাকার মানুষ মাছ ধরার প্রস্তুতি নিতে থাকে। বাঁশ দিয়ে ছোট বড় অসংখ্য পলো তৈরি করা হয়।

কোন দিন কোন বিলে মাছ ধরা হবে আগেভাগে জানানো হয়। এরপর শৌখিন ও পেশাদার শিকারিরা মাছ ধরতে নেমে পড়েন। এ গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। বংশপরম্পরায় চলে আসছে এভাবে মাছ ধরা। বিলে উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করে।

নড়াইল সদর উপজেলার বীড়গ্রামের রমেশ বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, তার বাড়ির পাশেই কাড়ার বিল। বর্ষা মৌসুমে টানাজাল পেতে বিল থেকে মাছ ধরেন। বিলের জল কোমর কিংবা হাঁটু সমান নেমে এলে, গ্রামের মানুষ দলবেঁধে পলো নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। এ সময় আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ আসেন। তিনি বলেন, সব দেশি প্রজাতির মাছ। অতি সুস্বাদু। পলো বাওয়ার দিন একেক জন গড়ে ৫ থেকে ১০ কেজি মাছ ধরেন। পেশাদার শিকারিরা আধা মণ থেকে এক মণ মাছ শিকার করেন।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মাছ ধরায় কেউ বাধা দেয় না। গ্রামের মানুষেরা দলে দলে এসে বিলর পারে বসেন। গল্পগুজব করেন। এরপর সবাই একসঙ্গে নেমে পড়েন। হইহল্লা হয়। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছেন, পলো দিয়ে মাছ ধরার বিরাট এ উৎসব হয়।

কালিয়া উপজেলার পিরলী ইউনিয়নের পিরলী গ্রামের গোলাম মোর্শেদ বলেন, এক সময় তাদের এলাকার বিলে প্রচুর মাছ ধরা পড়ত। বড় বড় বোয়াল, রুই, কাতলা পলোর নিচে আটকা পড়ত। তখন পাশের পলোওয়ালাও মাছটা তুলতে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেন। মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্যও ছিল অতি চমৎকার। প্রায় সবাই কোনো না কোনো পেতেন।

তবে এখন বিলে অসংখ্য ছোট বড় মাছের ঘের তৈরিসহ ফসলে বিষ প্রয়োগ করায় দেশি প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষমতা কমে গেছে। তারপরও বিলের পানি কমে গেলে অনেকেই ঘেরের আশপাশে ফাঁকা জায়গায় জমে থাকা পানিতে মাছ ধরতে নেমে পড়েন।

লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের ইছামতী বিলের আয়তন প্রায় দেড় হাজার একর। জেলার সবচেয়ে বড় বিল এটি। সারা বছরই এই বিলে মাঝখানে পানি জমে থাকে। সেখানে কোনো ফসল হয় না। তবে পানি কমতে থাকলে কোমর পানি থাকে সেখানে। তখন আশপাশের ছয়টি গ্রামের মানুষ মাছ ধরতে উৎসবে মেতে ওঠে। গ্রামের মাতবরেরা বৈঠক করে মাছ ধরার দিন ঠিক করেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম বলেন, নড়াইলের নদীর পানি মিষ্টি। বর্ষা মৌসুমে এই পানি খাল বিলে প্রবেশ করে বিধায় এখানে প্রচুর দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। তবে এক শ্রেণির কৃষক নদীতে পাট পচান এবং ফসলি জমিতে বিষ দেন। এ কারণে প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ক্ষমতা কমে গেছে। দেশি মাছের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিটি খাল, বিলসহ জলাশয়ে মাছের অভয়াশ্রম নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ রক্ষার্থে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর