বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কম্বল নেই, খসরুর ভরসা হোটেলের চুলার উত্তাপ

  •    
  • ৯ জানুয়ারি, ২০২১ ১৭:৫২

‘ট্রেইন ট্রেইন (ট্রেনে ট্রেনে) ভিক্ষা কইরা চলি, এমনে যা টেহা আইয়ে তা দিয়াই দুইডা ডাইল ভাত খাইয়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুমাইয়া থাহি। শীতের রাইতডা কাডাইতে খুব কষ্ট হয়। আর আমরার কাছে আছে হুদা (ছোট) একটা কম্বল। তাই হোটেলের লগে আইয়া হুতছি (শুয়েছি), যাতে বাইরে চুলার আগুনের গরমডা লাগে।’

রাত ১২.২০ মিনিট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন স্লান আলোতে দেখা যায়, বস্তার মত সারিবদ্ধ হয়ে কিছু পড়ে আছে।

দূর থেকে দেখলে মনে হয় পরিত্যক্ত জিনিসপত্র। তবে কাছে গেলে দেখা যায়, প্ল্যাটফর্মের মাটিতে সামান্য কাপড় নিজের উপরে দিয়ে মাটিতে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছেন কিছু মানুষ। তবে শীতের কারণে সামান্য আচ্ছাদনে ঘুম আসছে না কিছুতেই। শীত ঠেকাতে জবুথবু হয়ে আছে সবাই।

বিভিন্ন এলাকার গৃহ ও ঠিকানাহীন ছিন্নমূল মানুষ এরা। দিনে নানা কাজ শেষে রাতে রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও শহরের বিভিন্ন ফুটপাতই তাদের আশ্রয়।

সেখানেই নিজেদের কাছে থাকা সামান্য বস্ত্র দিয়ে চলে ঠান্ডার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। রাতটা কোনোভাবে পার করার অপেক্ষা।

শহরের স্টেশন রোডের একটি রেস্টুরেন্টের পাশে ছোট্ট একটি স্থানে দেখা মেলে এমনই দুই জনের সঙ্গে।

ছোট একটা চাদরের মধ্যে জবুথবু হয়ে শুয়ে থাকা মানুষগুলোর কাছে গিয়ে একটু ডাক দিতেই চমকে উঠেন এক জন। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বলে ওঠেন, ‘কাকা সকালে উইঠঠা এহান থেইক্কা চইলা জামু গা।’

কথা বলার পর জানা যায়, তাদের মধ্যে এক জন ৫২ বছর বয়সী খসরু মিয়া আরেক জন তার নাতি ১৬ বছরের রায়হান।

খসরু বলেন, ‘আমার কোনো বাড়ি-ঘর নাই। ভিক্ষা কইরা খাই। নাতিডাও আমার লগে ভিক্ষা করে, কিন্তু কথা কইতে পারে না।

‘আমার বাড়ি আছিল কুমিল্লা। ট্রেইন ট্রেইন (ট্রেনে ট্রেনে) ভিক্ষা কইরা চলি, এমনে যা টেহা আইয়ে তা দিয়াই দুইডা ডাইল ভাত খাইয়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুমাইয়া থাহি।’

খসরু আরও বলেন, ‘শীতের রাইতডা কাডাইতে খুব কষ্ট হয়। আর আমরার কাছে আছে হুদা (ছোট) একটা কম্বল। তাই হোটেলের লগে আইয়া হুতছি (শুয়েছি), যাতে বাইরে চুলার আগুনের গরমডা লাগে।’

জেলা পরিষদ মার্কেট এলাকায় থাকা খবির আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শীতের রাইত আমাডার এমনেই কাটাইতে হইব বাবা। কেউ তো আমরারে দেহে না।

‘মনডা চাইলে ৫-১০ টাকা আমডারে দিয়া যায়। এইডি দিয়া শীতের পোশাক কেমনে কিনমু। দেখতাছ না বাবা কেমনে শীতের মইধ্যো মাটিত হুইত্তা (শুয়ে) রইছি।’

শহরের কালীবাড়ির মোড়, ফকিরাপুল, কুমারশীল মোড়, বঙ্গবন্ধু স্কয়ারসহ অধিকাংশ এলাকায় দেখা মেলে ছিন্নমূল মানুষের এমন জীবনসংগ্রাম।

কিছু সামাজিক সংগঠন এসব মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। অনেকেই এসব শীতবস্ত্র পাননি বলে জানান। সরকারি সহায়তাও খুব একটা পান না এসব মানুষ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুব আলম নিউজবাংলাকে জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ১০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।

সরকারিভাবে সবমিলিয়ে জেলায় অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে ৬০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর