মহাসাধক ভদন্ত শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ১০২তম জন্মোৎসব ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে হাজারো পুণ্যার্থী সমবেত হন।
বৃহস্পতিবারই দূর-দূরান্ত থেকে রাজবন বিহারে আসতে থাকেন পুণ্যার্থীরা। ভক্তদের শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলে ছেয়ে যায় বনভান্তের নিস্প্রাণদেহ।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায় বনভান্তের মরদেহে আনুষ্ঠানিকভাবে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। ভোর ছয়টায় রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার দেশনালয়ে বনভান্তের ১০২ তম জন্মোৎসবের কেক কাটেন রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। কেক কাটা অনুষ্ঠানে যোগ দেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। নানা রঙে তৈরি তোরণ ও বেলুনে সাজানো হয় গোটা রাজবন বিহার এলাকা।
পরে বৌদ্ধ পতাকা উত্তোলন, পঞ্চশীল প্রার্থনা, বুদ্ধপূজা, ত্রিপিটক পূজা, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান, প্রদীপ পূজা ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দিনটি ঘিরে শুক্রবার সকালে প্রধান বৌদ্ধ তীর্থস্থান রাঙ্গামাটির রাজবন বিহার, রত্নাংকুর বনবিহার, যুমচুগ বনাশ্রম বনভাবনা কেন্দ্র, ধনপাতা সাধনা বনবিহার, গর্জনতলী পাড়া শাক্যমণি বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন শাখা বনবিহারে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
সকালে মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ধর্মীয় সভা। অনুষ্ঠানে পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন ৬ নং বালুখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিজয়গিরি চাকমা। বিশেষ প্রার্থনা পাঠ করেন বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমীয় খীসা।
বনভান্তের বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে পুণ্যার্থীদের মধ্যে ধর্মদেশনা দেন, রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান ভদন্ত শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক ভদন্ত শ্রীমৎ জিনবোধি মহাস্থবির, পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরের অধ্যক্ষ ভদন্ত শ্রীমৎ শাসন রক্ষিত মহাস্থবিরসহ অন্য ভিক্ষুরা।
জীবদ্দশায় রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন ভদন্ত শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে। তার জন্ম ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি সদরের ১১৫ নম্বর মগবান মৌজার মোড়ঘোনা গ্রামের এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে। তিনি মহামতি গৌতম বুদ্ধের পথ অনুসরণ করে ১৯৪৯ সালে গৃহত্যাগ করেন। যার পথ ধরে নির্বাণ লাভের মধ্য দিয়ে দেহত্যাগ করেন ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি।
পুণ্যার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, সদস্য সবির কুমার চাকমা, ইলিপন চাকমা।
সন্ধ্যায় হাজারো প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ফানুস উড়িয়ে শেষ হয় এ উৎসবের।