কেউ বসবাস করেন সরকারি খাস জমিতে, কেউ আবার অন্যের জমিতে। নওগাঁয় ভূমি ও গৃহহীন এমন এক হাজার ৫৬টি পরিবারের স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে মুজিববর্ষে।
গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। তবে এরপরও জেলায় গৃহহীন থাকছে আরও প্রায় সাড়ে সাত হাজার পরিবার। তাদেরও পর্যায়ক্রমে ঘর করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নওগাঁর ১১টি উপজেলায় নিজস্ব ঘর নেই এমন এক হাজার ৫৬টি পরিবারকে এসব ঘর করে দেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যেই এসব ঘর জমিসহ সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। তবে উপকারভোগীদের এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন দিয়ে বাস্তবায়নাধীন এসব ঘর করতে সব মিলিয়ে খরচ হচ্ছে ১৮ কোটি ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। ঘরে রয়েছে দুইটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, টয়লেট ও বারান্দা।
রাণীনগর উপজেলার বরগাছা ইউনিয়নের খাঁসগড় গ্রামের উপকারভোগী সেফাতুল্ল্যা প্রামাণিক বলেন, ‘হামার (আমার) লিজের (নিজের) কোনো ঘর ন্যাই। বউ, ছেলে-মেয়েক লিয়ে পরের জুমিত (জমিতে) পাটখড়ি ও পলিথিন দিয়া টং ঘর তুলে থ্যাকতাম (থাকতাম)। এখন এই ঘর প্যালে লিজের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হোবে।’
মহাদেবপুর উপজেলার নাটশাল গ্রামের রিকশাচালক জিয়াউল হক বলেন, ‘হামি ঢাকায় রিকশা চালাত্যাম। করোনার কারণে বাড়িত চলে আসি। হামার লিজের কোনো ঘর-জুমি নাই। মাইনষের জমিত টিন ঘির্যা কোনো রকমে বউ-বাচ্চা লিয়া থাকতে হচ্চে। এখন সরকার থ্যাকা দেয়া ঘর পামু, এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কী হবার পারে।’
নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এ কাজ বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা সারা দিন নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।’
‘আগামী ১০ই জানুয়ারির মধ্যে শেষ হবে এসব বাড়ি নির্মাণের কাজ। এর পরই বাড়িগুলো গৃহহীন পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। প্রতিটা ঘরে স্যানিটেশন ও ইলেকট্রিসিটিসহ নাগরিক সুবিধা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নওগাঁর সব উপজেলায় নির্মাণরত এসব ঘরের কাজ পরিদর্শন করেছি। এ সময় উপকারভোগীদের মাঝে এই ঘর প্রাপ্তির খবরে যে আনন্দের ঝিলিক দেখতে পেয়েছি, সেই আনন্দ অশ্রু আমাদের আগামীর পথচলার প্রেরণা হয়ে থাকবে।’