বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আজ দিনাজপুরের সেই বেদনাবিধুর দিন

  •    
  • ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১৬:৫৩

১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাংকারের পাশে সারাদিনের উদ্ধারকৃত গোলাবারুদ গাড়ি থেকে নামাতে গিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে একটি মাইন মাটিতে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই তা বিস্ফোরিত হয় এবং সেইসঙ্গে বাংকারটিতে রাখা সকল আগ্নেয়াস্ত্র বিস্ফোরিত হয়।

৬ জানুয়ারি দিনাজপুরের ইতিহাসের এক বেদনাবিধুর ও শোকের দিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজানাথ হাই স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পে এক ভয়াবহ মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সেদিন পাঁচ শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। আহত হন বহু বীর মুক্তিযোদ্ধা। সেই বিস্ফোরণের চিহ্ন এখনও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা।

দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজানাথ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাসুদ আলম নিউজবাংলাকে জানান, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এরপরই দিনাজপুর শহরের মহারাজা হাই স্কুলে স্থাপিত হয় ‘মুক্তিযোদ্ধা ট্রানজিট ক্যাম্প’।

১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলাসহ আশপাশের অন্যান্য জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হামজাপুর, তরঙ্গপুর, পতিরাম ও বাঙ্গালবাড়ী ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা এই ক্যাম্পে আসতে থাকেন। ধীরে ধীরে এই ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাড়ায় পাঁচ শ ছাড়িয়ে যায়।

এই ক্যাম্পের বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়তেন পাকিস্তানি বাহিনীর ফেলে যাওয়া, লুকিয়ে ও পুতে রাখা মাইন ও অন্যান্য গোলাবারুদ উদ্ধারে। আবার সন্ধ্যায় উদ্ধারকৃত মাইন ও গোলাবারুদ নিয়ে এসে জমা করতেন মহারাজা স্কুলের দক্ষিণাংশে খনন করা বাংকারে।

১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাংকারের পাশে সারাদিনের উদ্ধারকৃত গোলাবারুদ গাড়ি থেকে নামাতে গিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে একটি মাইন মাটিতে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই তা বিস্ফোরিত হয় এবং সেইসঙ্গে বাংকারটিতে রাখা সকল আগ্নেয়াস্ত্র বিস্ফোরিত হয়। এতে এক নারকীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয় মহারাজা স্কুল প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায়। ধ্বংস হয়ে যায় মহারাজা স্কুলের দ্বিতল ভবনসহ আশপাশের অধিকাংশ ঘরবাড়ি। পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। আহত হন আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা। এদের অনেককে ভারতে কোলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেই সময় আহত বহু বীর মুক্তিযোদ্ধার হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলতে হয়।

‘৬ জানুয়ারি স্মৃতিপরিষদ’ এর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল হক ছুটু নিউজবাংলাকে জানান, ৬ জানুয়ারির মাইন বিস্ফোরণে কতজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হয়েছেন তা এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায়নি। তবে সকালের রোলকলে উপস্থিত ছিলেন ৭৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা। দুর্ঘটনার আগে ৫০ থেকে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছুটি নিয়ে নিজ নিজ বাড়ি চলে যান। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সাড়ে চার শ মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তিনিসহ ক্যাম্পে অবস্থানরত অনেক মুক্তিযোদ্ধার হাত-পা, মাথা অনেক দূরে ছিটকে যায়। দুর্ঘটনার পর পরই শতাধিক আহত মুক্তিযোদ্ধাকে ভর্তি করা হয়েছিল দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল ও সেন্ট ভিসেন্ট মিশন হাসপাতালে। এদের মধ্য থেকে পরে একে একে ২৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যান।

তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পরদিন ৭ জানুয়ারি দিনাজপুর গোর-এ শহিদ বড় ময়দানে শহিদদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সামরিক মর্যাদায় ১২৫ জন শহিদের লাশ দাফন করা হয় ঐতিহাসিক চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে। হাসপাতালে মারা যাওয়া ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধার লাশও চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়। নিহতদের মধ্যে সে সময় ৫৮ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়। পরে পর্যায়ক্রমে পাওয়া যায় আরো ৬৪ শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ও পরিচয়।

দিবসটি পালন উপলক্ষে ৬ জানুয়ারি স্মৃতি পরিষদ ও মহারাজা গিরিজানাথ হাই স্কুল প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকাল ৯টায় চেহেলগাজী মাজারে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণসমাধি ও মহারাজা স্কুলের শহিদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা এবং বাদ আসর মহারাজা স্কুল জামে মসজিদে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

এ বিভাগের আরো খবর