বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরিচর্যায় বাড়ছে বোস্তামী কাছিম

  •    
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২১ ১৪:৫৫

‘সঠিক পরিচর্যার কারণে এখন বোস্তামী কাছিমের সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই বছরে আড়াইশ বোস্তামী কাছিমের জন্ম হয়েছে। এখন পুকুরে কাছিম আছে সাড়ে সাতশর মতো।’

ভেতর থেকে হঠাৎ মাথা বের করে এদিক সেদিক দেখে। কালো রঙের চোখ, পিঠের উপর খোলসেও কালো কালো ছোপ। মানুষ দেখলে মাথা বের করে এগিয়ে আসে। বাঁশের কাঠিতে করে মাংস, পাউরুটি, কলা বা কোনো খাবার দিলে হাঁ করে তুলে নেয় মুখে।

চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে বায়েজিদ বোস্তামী মাজারের পুকুরে পশ্চিম পারের নিয়মিত দৃশ্য এটি। পুকুরটিতে থাকা বিপন্ন প্রজাতির বোস্তামী কাছিম দেখতে প্রতিদিন এখানে আসে শত শত মানুষ।

বোস্তামী কচ্ছপকে ২০১৫ সালে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)। তবে গত দুই বছরের পরিচর্যায় সেই কাছিমের সংখ্যাই দিন দিন বাড়ছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ জানান, ২০০৫ সালে একবার পুকুরটিতে বিষ দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। তখন পুকুরের পানি সেচে ফেলার সময় প্রায় ৫০০ কাছিম পাওয়া যায়।

তিনি আরও জানান, এসব কাছিম প্রতি বছর গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ ডিম দেয়। কিন্তু বাচ্চা হতো ১৫ থেকে ২০টি। বাচ্চা ফুটলেও সেগুলোর বড় একটি অংশ পুকুরে থাকা গজার ও মাগুর মাছে খেয়ে ফেলত। এ জন্য কাছিমের সংখ্যা না বেড়ে উল্টো কমে যাচ্ছিল।

যুগ যুগ ধরে কাছিমগুলো পুকুরের পারের নরম মাটিতে ডিম পেড়েছে। কিন্তু গত কয়েক দশকে পুকুরপাড়ের মাটি শক্ত হয়ে যাওয়া, পুকুর ঘেঁষে স্থাপনা নির্মাণ, কাক, কুকুরসহ নানা প্রাণী ডিম খেয়ে ফেলায় প্রজনন সংকট বাড়ছিল।

ইয়াছিন বলেন, ‘এ জন্য বোস্তামী কচ্ছপের বংশবৃদ্ধিতে আমরা গত দুই বছর ধরে মাজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছি। মাজারের পাশে একটি কৃত্রিম প্রজননকেন্দ্র তৈরি করে দিয়েছি। একটি এনজিও বাচ্চা ফোটানোর দায়িত্বে আছে।

‘সঠিক পরিচর্যার কারণে এখন বোস্তামী কাছিমের সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই বছরে আড়াইশ বোস্তামী কাছিমের জন্ম হয়েছে। এখন পুকুরে কাছিম আছে সাড়ে সাতশর মতো।’

দুই বছর ধরে এসব কাছিমের পরিচর্যার দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স।

প্রতিষ্ঠানটির ফ্যাসিলিটি ম্যানেজার ফাহিম জাহান নিউজবাংলাকে জানান, ২০১৯ সালে তারা ৫০টি ডিম থেকে ৩৪টি বাচ্চা ফোটান। আর ২০২০ সালে ৭৫২ ডিম থেকে বাচ্চা হয়েছে ২০৬টি।

পুকুরের মাগুর ও গজার মাছ খেয়ে ফেলে বলে আলাদা প্রজননকেন্দ্রে বড় করার পর বাচ্চাগুলোকে পুকুরে ছাড়া হবে বলেও জানান তিনি।

এই প্রজাতির কচ্ছপ পৃথিবীতে শুধু বায়েজিদ বোস্তামি পুকুরেই টিকে আছে বলে দাবি মাজারের মোতোয়ালি খোরশেদ আলমের।

তিনি বলেন, কয়েকশ বছর ধরে এগুলো মাজারের পুকুরে আছে। আগে এদের পরিচর্যায় তেমন নজর দেয়া না হলেও কয়েক বছর ধরে যথাযথভাবে দেখাশোনা করছে বন বিভাগ।

খোরশেদ আরও বলেন, মার্চ থেকে মে এই তিন মাস ডিম পাড়ে বোস্তামী কাছিম। জুন থেকে আগস্টের মধ্যে পূর্ণিমার তিথিতে সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে।

আগে বাচ্চা ফোটার পর সেগুলো পুকুরে চলে যেত এবং পুকুরের গজার ও রাক্ষুসে মাছের খাদ্যে পরিণত হতো। তবে এখন প্রজননকেন্দ্র থাকায় ডিমও নষ্ট হচ্ছে না, বাচ্চাগুলোকেও মাছে খেতে পারছে না।

বায়েজিদ বোস্তামী মাজারের পুকুরটি দৈর্ঘ্যে ৯৮ দশমিক ৮ মিটার এবং প্রস্থে ৬১ দশমিক ৩ মিটার। শুষ্ক মৌসুমে এর পানির গভীরতা আড়াই মিটার ও বর্ষায় পাঁচ মিটারে দাঁড়ায়।

১৯৮৫ সালে বোস্তামী কচ্ছপের ওপর ‘ক্যাপচার, মার্ক ও রিলিজ’ পদ্ধতিতে একটি গবেষণা চালান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান। এ ছাড়া ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বোস্তামী মাজারের কাছিমের সামগ্রিক চালচিত্র ও সংরক্ষণের ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান বলেন, ‘বিপন্ন প্রজাতির এই কচ্ছপ বায়েজিদ বোস্তামি মাজারে আছে। কচ্ছপের সংখ্যা বাড়ছে, সেটি অবশ্যই খুশির খবর। কারণ প্রাণীটি একসময় হারিয়ে যেতে বসেছিল। তবে এদের সংখ্যা আরও বাড়াতে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর