বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাছে-বাঁশে ৮ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সংযোগ

  •    
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০৯:০৫

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাণীনগর-আত্রাইয়ের ‘বিশ্ব বাঁধ’ সড়কের আট কিলোমিটার এলাকার কোথাও কোথাও মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিদ্যুতের তার; কোথাও কোথাও ঝুলে আছে এসব তার। এই আট কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থান থেকে বাঁশের খুঁটি দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হয়েছে কৃষি জমিতে।

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় প্রায় আট কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিতভাবে বিদ্যুতের তার টেনে নেয়া হয়েছে। অভিযোগ আছে, স্থায়ী খুঁটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নিয়ম থাকলে তাও মানেনি নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)। তারা গাছের ডাল ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে তার টেনেছে রাস্তার পাশ দিয়ে। পাশাপাশি সেচ পাম্পেও সংযোগ দিয়েছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে।

পাম্প মালিকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে ছয় বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সেচ পাম্প পরিচালনা করে আসছেন তারা। গত বছর দুটো গরু বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মারা যায়। এ জন্য জরিমানা দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা।

সম্প্রতি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাণীনগর-আত্রাইয়ের ‘বিশ্ব বাঁধ’ সড়কের আট কিলোমিটার এলাকার কোথাও কোথাও অরক্ষিতভাবে মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিদ্যুতের তার। কোথাও কোথাও ঝুলে আছে এসব তার। বিদ্যুতের বেশ কিছু মিটারের বক্সও ভাঙা পাওয়া গেছে।

ঝুলে থাকা এসব তারের নিচ দিয়ে স্থানীয়দের আসা-যাওয়া করতে হয়। বিচরণ করে গরু-ছাগল। আর এই আট কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থান থেকে বাঁশের খুঁটি দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হয়েছে জমিতে।

ঘোষগ্রামের সাব্বির হোসেন, জোনায়েদ হোসেনসহ কয়েকজন নিউজবাংলাকে জানান, রাণীনগর উপজেলার কুজাইল স্লুইস গেট থেকে ধনপাড়া পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার বৈদ্যুতিক খুঁটি ছাড়াই তার টেনে নিয়ে যাওয়া হয় ছয় বছর আগে। এ কাজে বাঁশ ও মরা গাছ ব্যবহার করা হয়। এখান থেকে অবৈধভাবে সেচ প্রকল্প ও রাইস মিলে সংযোগ দেয়া হয়েছে। এসব কারণে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। সব মিলে এলাকাবাসী ও পথচারীরা আতঙ্কে থাকেন।

উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের সোনাতলা, কাউটাগাড়ি, হামিদপুর, মিরার মাঠ ও ধনপাড়া ডুবের মাঠে প্রায় দেড় হাজার বিঘা মাঠ। এসব মাঠে বছরের পর বছর ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে আবাদ করে আসছিলেন কৃষকরা। এতে খরচ বেশি পড়ে যেত।

প্রায় ছয় বছর ধরে নেসকোর বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে আসছেন তিন পাম্প মালিক। এ জন্য উপজেলার ২ নম্বর স্লুইস গেট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূর পর্যন্ত মাঠে লাইন টানা হয়েছে বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করে। মাঝে বিদ্যুতের কোনো স্থায়ী খুঁটি নেই।

সেচ পাম্প মালিকরা বলছেন, সেচ পাম্পের মাধ্যমে কৃষকরা সুবিধা পেলেও তারা পাচ্ছেন না। নেসকোর তৎকালীন কর্মকর্তা ‘বড় অঙ্কের’ ঘুষ নিলেও খুঁটির ব্যবস্থা করে দেননি।

এদিকে আয়াপুর মৌজায় পাম্পের ছাড়পত্র নিয়ে ধনপাড়া মৌজায় পাম্প বসিয়ে সেচ কাজ পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে পাম্প মালিক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় আবুল হোসেন, নোহাস, তোহা, আবদুল জব্বার, মিঠুন ও কৃষক শাখাওয়াত হোসেনসহ কয়েকজন জানান, শ্যালো মেশিন দিয়ে আবাদে খরচ বেশি পড়ত। ছয় বছর ধরে সেচ পাম্পের পানি দিয়ে আবাদ করা হচ্ছে। এতে খরচ কমেছে। তবে যেভাবে বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছে, তা ঝুঁকিপূর্ণ।

তারা জানান, কোথাও কোথাও বাঁশের খুঁটি ও গাছের উপর দিয়ে তারগুলো দেয়া হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে তার মাটিতে পড়ে যায়। এতে মানুষের পাশাপাশি গরু-ছাগলও ঝুঁকিতে থাকে।

পাম্প মালিক আবদুস সালাম বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে কথা ছিল ৩ নম্বর স্লুইস গেট থেকে খুঁটি ও তার দেয়া হবে। কিন্তু ২ নম্বর স্লুইস গেট থেকে বিদ্যুতের খুঁটি ছাড়াই তার টেনে পাম্পে সংযোগ দিয়েছে।

তিনি জানান, তিনটি পাম্পের বিদ্যুতের জন্য প্রায় ২২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে লাইন দেয়া হয়েছে। ছয় বছর ধরে অরক্ষিতভাবে বিদ্যুতের লাইন ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু তারা সুবিধা পাচ্ছেন না।

তার অভিযোগ, বিদ্যুতের লাইনের কারণে বিলের টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। প্রতি বছর খুঁটি পরিবর্তন করতে বাড়তি খরচ হচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি গরু-ছাগল নিয়েও আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের।

আবদুস সালাম বলেন, অরক্ষিতভাবে লাইন থাকায় গত বছর দুটো গরু মরে যাওয়ায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। মানুষ মরলে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হতো। অফিসে যোগাযোগ করলে সময় নেয়, কাজ হয় না। কিছু খরচের টাকা (ঘুষ) দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা অনেক টাকা দাবি করে।

আরেক পাম্প মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘ লাইনের কারণে চৈত্র মাসে ভোল্টে সমস্যা হয়। বিদ্যুতের খুঁটি বসানো হলে ট্রান্সমিটার কাছে থাকলে ভোল্ট স্বাভাবিক পাওয়া যেত। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূর থেকে নিজস্বভাবে তার টেনে পাম্প চালোনো হচ্ছে।

এ সময় আয়াপুর মৌজায় পাম্প বসানোর ছাড়পত্র নিয়ে ধনপাড়া মৌজায় পাম্প বসিয়ে সেচ কাজ পরিচালনার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

মিরাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনাহীন বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি।

বৈদ্যুতিক তার বিচ্ছিন্ন না করে দ্রুত খুঁটি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন এই চেয়ারম্যান।

জানতে চাইলে নওগাঁ নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী রেজানুল হক বলেন, ‘আমি কিছুদিন পূর্বে নওগাঁয় দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। ওই এলকায় সংযোগগুলো অনেক আগের। ওই এলাকার জমি সেচের অভাবে পতিত ছিল।

‘সেচের কারণে বছরে দুটি ফসল হচ্ছে। কৃষকদের কথা চিন্তা করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। গাছের সঙ্গে সংযোগের কারণে যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য নিয়মিত তদারকি করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘হেড অফিসের প্রজেক্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই খুঁটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর