ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ভাষাসংগ্রামী ডা. গোলাম মাওলা সেতুটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে। এর পাঁচ বছর পরও সেখানে হয়নি কোনো সেতু।
২০১৭ সালে পাশেই নতুন একটি সেতু নির্মাণ শুরু হলেও তিন বছরে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে নিয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণেই দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা বরকত হোসেন মুরাদ বলেন, ‘ঠিকাদারের গাফলতির কারণেই কাজের এমন দশা। বছরের পর বছর পার হচ্ছে, কিন্তু দুইডা পেলার ছাড়া আর কিচ্ছু হয় নাই। চার-পাঁচ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছে। এতে এক যুগেও বেরিজের কাজ শেষ হইত না।’
গোলাম মাওলা সেতু দিয়ে যাতায়াত করতো নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। সেতু বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। ভারী যানগুলোকে শরীয়তপুর সদরের প্রেমতলা হয়ে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জানায়, ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে কীর্তিনাশা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। যাতায়াতের পাশাপাশি পণ্য পরিবহণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেতুটি।
এলজিইডি শরীয়তপুর কার্যালয় জানায়, জনদুর্ভোগ কমাতে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির পাশে নতুন একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ১৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যে ওই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
এজন্য ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস নাভানা কনস্ট্রাকশনকে সেতু নির্মাণের কাজ দেয়া হয়। ২০১৯ সালের জুনে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কয়েক বার মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ শেষ হয়নি।
এর পর তিন বছরে চারটি পিলারের মধ্যে মাত্র দুটির কাজ শেষ হয়েছে। দুটি এভারমেন্ট ওয়ালের মধ্যে শেষ হয়েছে একটি। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি বিল নিয়েছে দুই কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
নড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী শাহাবউদ্দীন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। কাজে দেরি হওয়ায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তার চুক্তি বাতিল করা হবে।’
চলতি বছরের মার্চে নতুন ডিজাইনে সেতুর কাজ শুরু হতে পারে বলেও জানান তিনি।
নড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম জানান, ‘বেরিজের বন্ধ অওয়ার পর থেইকা বেচা-বিক্রি কইমা গেছে। মাল আনতে নিয়ে নানা সমস্যার মইধ্যে আছি। অহন আর বেরিজের ওপাড়ের মানুষ আমাগোর বাজারে আহে না। হেরা অন্যতন বাজার থেইকা সব কিনে।’
নড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. হারিস বলেন, ‘আমি আমার বিল্ডিংয়ের কাজ ধরছি। ইট কিনছি নদীর ওপারের ভাটা থেইক্কা। এহন ব্রিজের লাইগা আনতে পারি না, ১৫ কিলোমিটার ঘুইরা ইট আনতে অয়।’
এ বিষয়ে কথা বলতে সেতু নির্মাণ এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী আবুল হাশেমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।