চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে জমে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় খেজুরের গুড়ের হাট। গুড় কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন ব্যাপারীরা। বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য কয়েক শ বছরের।
জেলার সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সরোজগঞ্জে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে স্থানীয় সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ হাট বসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার বসে এ হাট।
প্রতি সপ্তাহে প্রায় দুই কোটি টাকার গুড় কেনাবেচা হয় এখানে। মাটির হাড়ি বা ভাড়ের আকার ও ওজন ভেদে দাম ওঠানামা করে। এক ভাড় গুড় ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। স্বাদে ও গন্ধে এখানকার গুড় অতুলনীয়। অন্যান্য বারের তুলনায় এখানকার খেজুরের গুড়ের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বাড়ছে।
সম্প্রতি এ হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটজুড়ে সাজানো গুড়ভর্তি মাটির ভাড় ও ছোট ছোট ধামা-কাঠায় নলেন পাটালি। ক্রেতা-বিক্রেতারা তা দাঁড়িয়ে দেখছেন। দরদাম ঠিক হলে ওজন করে ভর্তি করা হচ্ছে ট্রাক। আবার কেউ কেউ নিজের বাড়ি বা আত্মীয়ের বাড়ি পাঠানোর জন্য কিনছেন গুড়।
হাটের প্রবেশপথের দুইধারে বসে কৃষকেরা ধামা-কাঠায় করে তাদের বাড়িতে তৈরি পাটালি বিক্রি করছেন। পাটালির দোকান পার হয়ে ভেতরে যত যাওয়া যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ততই চোখে পড়ে সারি সারি সাজানো গুড়ের ভাড়। হাটের একাধিক স্থানে দাঁড়িপাল্লায় গুড় মেপে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা।
সরোজগঞ্জ গুড়ের হাটে গুড় বিক্রি করতে আসা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কালুরপোল গ্রামের গাছি জহুরুল হক বলেন, ‘গত বিশ বছর ধরি এই হাটে গুড় নিয়ে আসচি। আমাদের কাছ থেকি দেশের মেলা জাগায় থেকি ব্যাপারীরা গুড় কিনি নি যায়। ভাড় প্রতি গুড় ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ভাড়ের দাম বেড়িচে। এ কারণে অনেক সময় কম লাভ হয়।’
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর শীত মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেজুরের গুড় বেচাকেনা হয় এ হাটে। মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময় হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে জমজমাট থাকে এই হাট।
বাজার কমিটির সভাপতি এম আবদুল্লাহ শেখ জানান, এ হাট থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় গুড়। প্রতি হাটের দিন গড়ে ২৫০ টন খেজুরগুড় বিক্রি হয়। যার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।
তিনি দাবি করেন, সরোজগঞ্জ হাটে বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ গুড়ই এলাকার কৃষকেরা বাড়িতে যত্নের সঙ্গে তৈরি করেন। এতে চিনি বা কোনো রাসায়নিক নেই। কিছুটা খয়েরি রঙের হলেও এসব গুড় পুরোটাই খাঁটি।
স্থানীয় পাইকাররা জানান, আগের তুলনায় গুড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২ থেকে ১৪ কেজি ওজনের এক জোড়া গুড়ের ভাড় প্রায় এক হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে গুড় কিনতে আসা শহীদ হাসান জানান, দেশের অন্যান্য হাটে এখানকার চেয়ে কম দামে গুড় পাওয়া যায়। তবে, সেসব গুড়ে চিনি মেশানো থাকে বলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কেউ তা কেনেন না। বেশি দাম জেনেও ব্যাপারীরা ভালো গুড় কিনতে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জেই ছুটে আসেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমানে এ জেলায় ২ লাখ ৫০ হাজারের মতো খেজুরগাছ রয়েছে। যার প্রায় অর্ধেকই সদর উপজেলায়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে গুড়ের মৌসুম। প্রতি মৌসুমে গড়ে আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলী হাসান জানান, মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে অন্তত ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হয়।