বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় আরও এক জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
রোববার সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লবের আদালতে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সামসুল আমিন। সুরতহাল প্রতিবেদনের সাক্ষী হিসেবে তিনি সাক্ষ্য দেন।
২০১৫ সালে সকালে নিজ বাসার সামনে খুন হওয়ার পর অনন্ত বিজয়ের মরদেহ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানেই মরদেহের সুরতহাল করা হয়। সুরতহালের সময় উপস্থিত ছিলেন সামসুল আমিন। পরে তিনিই অনন্তের ময়নাতদন্ত করেন।
এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলার ১৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম জানান, মামলার ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে পাঁচ বছরে মাত্র ১৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, এর আগে গত ১ ডিসেম্বর আবুল কাশেম নামে এক কলেজ শিক্ষক সাক্ষ্য দেন। মরদেহ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা রজত কান্তি গুপ্ত ৩ নভেম্বর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরমান আলি ৬ অক্টোবর সাক্ষী দেন।
ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল মজিদ খান বলেন, ‘এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীসহ ১৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া বাকি। দ্রুত সাক্ষ্য নেয়ার কাজ চলছে।’
২০১৫ সালের ১২ মে সকালে সিলেট নগরীর সুবিদবাজারে নিজ বাসার সামনে খুন হন লেখক ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনন্ত বিজয় দাশ। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলে উগ্রবাদীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
সুবিদবাজারের রবীন্দ্র কুমার দাশ ও পীযূষ রানী দাশের দুই মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে অনন্ত সবার ছোট। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করার পর সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন তিনি।
ওই দিনই অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযুক্তরা হলেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বীরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী (৩০)।
এর মধ্যে আবুল, ফয়সাল ও হারুন পলাতক। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি।
মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায়ে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
গত বছরের ৭ মে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার সর্বশেষ সাক্ষ্য নেয়া হয়। এরপর সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে পিছিয়ে যায় সাক্ষ্য নেয়া।
এখন পর্যন্ত এ মামলার আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি হয়নি। দীর্ঘদিন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্য নেয়ার পর গত বছর মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।