কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নহল চৌমুহনী গ্রামের আবদুর রহমান। ১৫ বছর আগে টিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে গিয়ে ডান হাতটি কাটা পড়ে তার। এরপর শুরু করেন পত্রিকা বেচা।
তবে ঝামেলা বাঁধে দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর। যে এজেন্টের কাছ থেকে আবদুর রহমান পত্রিকা নিতেন, ১০ মাস আগে ব্যবসা ছেড়ে দিলে বেকার হয়ে পড়েন তিনি।
এরপর বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তিনি।
রহিমের আশা, শারীরিকভাবে অক্ষমদের জন্য সরকারি কোনো সহায়তা যদি পাওয়া যায়, তবে বাবা-মা ও সন্তানদের নিয়ে একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারবেন।
আবদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাই ১৫ বছর ধইরা পত্রিকা বেচি। লাস্ট গত ১০ মাস পত্রিকা বেচতাম পারি না। আমার এজেন্ট পেপার বেচা বন্ধ কইরা দিছে। আমি বেকার হইয়া গেছি।
‘তয় পত্রিকা বেচা বন্ধ হইলেও আমি ঘুমের মইধ্যে লাফ দিয়া উডি। কোন সময় জানি পত্রিকার গাড়িডা চইল্লা যায়।’
আবদুর রহমান স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘এক বার ঘুমে আছিলাম, পত্রিকার গাড়িডা বহুত দূরে চইল্লা যায়। এর লাইগ্গা বেইন্নালা (ভোরে) পত্রিকার লাগ্গি (জন্য) বাইর হইতাম।
‘গাড়িত থাইক্কা পেপার লইয়া সাইকলে বাইন্ধা এক আতে (হাতে) সাইকেল চালাই, পেলাস্টিকের হেই আত পেপারের উপরে ফালাইয়া রাখি। এমনি পতিদিন ৪০ মাইল ঘুইরা পেপার বেচি।’
বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে আবদুর রহমানের সংসার। বড় মেয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে পড়ে ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণিতে। ছোট মেয়েটার বয়স দুই বছর।
ছোট্ট শিশুটির জন্য গত ১০ মাসের মধ্যে একদিনও দুধ কিনে দিতে পারেননি বলে আক্ষেপ করেন আবদুর রহমান।
তিনি জানান, সবশেষ কবে মাছ, মাংস কিনেছেন তা মনে নেই। যখন ছেলে-মেয়েরা ভাত দিলে মাছের জন্য কান্না করে, তখন আর সহ্য হয় না।
শারীরিকভাবে অক্ষম এ হকার বলেন, সরকার পঙ্গু-প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য কত কিছু করে। তাকে যদি বাঁচার মতো কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারতেন।