ফরিদপুর শহরের অদূরে মুন্সীবাজার এলাকায় কুমার নদের পারে ঝুপড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ২১টি বেদে পরিবার। ২০টি শিশুসহ সদস্য সংখ্যা ৫৭।
শনিবার সকাল থেকে এই বেদেপল্লি ছিল উৎসবমুখর। শিশুরা সকালেই উপহার হিসেবে হাতে পায় রঙিন জামা। এরপর তাদের দেয়া হয় নাশতা। দিনভর নানা রকম খেলায় মেতে ওঠে। জিতে নেয় পুরস্কার। দুপুরের খাবার জুটেছে। বিকেলে আরেক দফা নাশতা। আর দশটা শিশুর মতোই ওরা কুটি কুটি হেসেছে। বাদ যাননি বেদে-বেনিরাও।
‘নতুন বছরের হাসি ফুটুক তাদের মুখে’-এ প্রত্যয় সামনে রেখে ফরিদপুরে তরুণ-তরুণীদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণমূলক সংগঠন ‘উৎস’ ব্যতিক্রমী এই আয়োজন করে।
শিশুদের জন্য খেলাধুলার মধ্যে ছিল সাজগোজ, মারবেল দৌড়, বিস্কুট দৌড়, এক পায়ে দৌড়, বাদাম কুড়ানো, ঝুড়িতে বল ফেলা প্রভৃতি।
বেদে ও বেদেনিদের জন্য ছিল বল বদল খেলা। এ খেলায় অংশ নেন উৎস পরিবারের সদস্যরাও। তারাও বল বদল ও চেয়ার সেটিং খেলায় অংশ নেন। প্রতিটি খেলায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের হাতে তুলে দেয়া হয় পুরস্কার।
নদীর কিনারে এই বেদেপল্লির শিশুরা সকালে পেয়ে যায় নতুন পোশাক। এতে ওরা দারুণ খুশি হয়। এরপর নাশতা দেয়া হয়। দুপুরে বেদেপল্লির সবাইকে খাওয়ানো হয় মাংস ও খিচুড়ি। এ কারণে বেদেনিদের রান্নার ঝামেলা পোহাতে হয়নি। তারাও আনন্দে মেতে ওঠেন।
বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বেদেশিশুরা নাচ ও গান পরিবেশন করে। সব শেষে বেদে পরিবারের সদস্যদের হাতে কম্বল তুলে দেয়া হয়।
দিনটি কেমন কাটল জানতে চাইলে ৮৪ বছর বয়সী বেদে মাহমুদ ধনী মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কলেজের পোলাপাইনরা আমাগো আর আমাগো পোলাপাইনের ফুর্তির জন্য যা করছে, এর আগে কেউ এমন করে নাই। পোনাপাইনের খুশি দেইখ্যা মন ভইরা গ্যাছে।’
বেদেনি সফিয়া বেগম বলেন, ‘নাতিপুতিরা খেলছে। দেইখ্যা চোখ জুড়াইয়া গেছে গা। আইজ আমরার চুলা জ্বালাইতে অয় নাই। রান্না করতে মানা করেছে। পোলাপানরাই খাওন দিছে। খুব ভালা লাগছে।’
শিশু রত্না বলে, ‘আইজ কোনো কাম নাই, শুধু খেলা আর খেলা। ব্যাপক মজা পাইছি।’
শিশু সাগর ইসলাম বলে, ‘সারা বচ্ছর এ রহম খেলতে পারলে বড় ভালা লাগত।’
বেদেপল্লির সর্দার জমিরুল মণ্ডল বলেন, ‘আমরা মাইনসের ভালাবাসা পাই না। সবাই ধুর ধুর কইরা তাড়ায়া দেয়। আইজ বুঝলাম এই সমাজে অনেক ভালা মানুষও আছে। হেরা আমাগোর কথাও ভাবে।’
‘উৎস’ ফরিদপুরের সভাপতি দিদারুল ইসলাম সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি বলেন, ‘সমাজের যারা অবহেলিত, সমাজ যাদের যোগ্য মর্যাদা দেয়নি, তাদের জন্য এ আয়োজন করতে পেরে ভালো লাগছে। বছরের একটি দিনের জন্য তো তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলাম। এটা ভেবেই ভালো লাগছে।’