দুই বন্ধুর নামই সুলতান। এক জন সুলতান হোসেন মাঝি ও আরেক জন সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী।
ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার নেহালপুর গ্রামের সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী ২৫-২৬ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা সুলতান হোসেন মাঝির মুক্তিযুদ্ধের ওসমানী সনদ নিয়ে তাকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নিয়ে দেয়ার নাম করে নিজের নামেই করে নেন সেই সনদ। পরে সুলতান মাঝির নাম করে সুলতান দুয়ারী ভোগ করতে থাকেন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা।
বিষয়টি ধরা পড়ায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সুলতান দুয়ারীর গেজেট ও সনদ বাতিল করে দেয়।
এবার সুলতান দুয়ারীকে গ্রেপ্তার ও তার বিচার দাবিতে শনিবার ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন সুলতান মাঝির পরিবার ও স্থানীয়রা।
মানববন্ধনে সুলতান দুয়ারীর আত্মসাৎ করা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রায় ১০ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার দাবি জানানো হয়।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাঝির পরিবার। মৃত সুলতান মাঝির স্ত্রী ফরিদা বেগমের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়েন তার তার ভাগ্নে সোহেল হাওলাদার।
বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ঝালকাঠি সদর উপজেলার পিপলিতা গ্রামের সুলতান মাঝির মুক্তিযুদ্ধের ওসমানি সনদ ২৫-২৬ বছর আগে নেয় তার বন্ধু একই উপজেলার নেহালপুর গ্রামের সুলতান দুয়ারী। বন্ধুর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করিয়ে দেয়ার কথা বলে নিজের নাম দিয়ে ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা নিজের নামে করে নেন সুলতান দুয়ারী।
অভিযোগ করা হয়, গত ১৫ বছরে ভাতা হিসেবে প্রায় দশ লাখ টাকা উঠিয়েছেন সুলতান দুয়ারী। তার স্ত্রী-সন্তান পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি। এমনকি মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরের জন্যও আবেদন করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতান মাঝির ছেলে মিরাজ মাঝিসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
তারা জানান, গত বছরের ২২ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সুলতান দুয়ারীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট বাতিলের চিঠি ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে।
মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়া সুলতান দুয়ারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে প্রকৃত সুলতান মাঝিকে গেজেটভুক্ত করে ভাতা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সুলতান মাঝির পরিবার।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুলতান দুয়ারীর দাবি, তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। বলেন, ‘আমার সনদ বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছি। মামলা চলমান অবস্থায় গেজেট বাতিল বেআইনি।’
ঝালকাঠি সদরের ইউএনও সাবেকুন্নাহার বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরে সুলতান দুয়ারীর ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে কি না, সে বিষয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’