‘চ্যার ছেলেক পড়ালেখা শিকায়ে (শিখিয়ে) ব্যবসা দ্যাঁড় (দাঁড়) করে দিসি। কিন্তু আমার নিজের ব্যবসার লসের সময় কেউ অ্যাগে (আগায়ে) আসেনি।’
দুঃখ করে কথাগুলো বলছিলেন শামছুল আলম। তিনি নওগাঁয় আদালতের সামনের ফুটপাতে একেক সময় একেক রকম পণ্য বিক্রি করেন।
শীতের শুরু থেকে তাকে বিক্রি করতে দেখা যায় মাস্ক, সার্জিক্যাল গ্লাভস, শীতের পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ছোটখাটো জিনিস।
৭৫ বছর বয়সী শামছুলের সঙ্গে কথার শুরু করতেই ফিরে যান নব্বইয়ের দশকে।
তিনি জানান, তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে। বাপ-দাদার ভিটে বিক্রি করে সে সময় চার সন্তানকে নিয়ে নওগাঁয় এসে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন।
শহরের কাপড়পট্টিতে দোকান কেনেন; শুরু করেন ব্যবসা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
ব্যবসায় ভালো লাভ করতে শুরু করেন শামছুল। পার-নওগাঁ এলাকায় জায়গা কিনে বাড়িও করে ফেলেন।
বড় দুই ছেলেকেও ঢাকায় ব্যবসা দাঁড় করিয়ে দেন। তারা ব্যবসার লাভের টাকা থেকে নিজেদের ফ্ল্যাট কেনেন। ছোট দুই ছেলে নওগাঁতেই আলাদা কাপড়ের দোকান দেন। সব মিলিয়ে ভালোই চলছিল শামছুলের জীবন।
কিন্তু ২০০৪ সালে তার দোকানের দুই কর্মচারী কয়েক লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই সময় শারীরিক সমস্যার জন্য শামছুলের দুটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এই টাকা জোগাড় করতে কাপড়সহ দোকান বিক্রি করে দেন।
এই দুঃসময়ে ছেলেরা এসে পাশে দাঁড়ায়নি বলে জানান শামছুল।
‘ছেলেদের নামে সব করে দেয়া আমার ভুল হোসে (হয়েছে)। সে জন্য নিজের হাতে করা ব্যাড়িত (বাড়িতে) আমার জাগা হলো না। ছোট এটা (একটা) টিনশেড ঘরে এখন আমি আর আমার স্ত্রী থ্যাকি (থাকছি)।’
কথা হয় শামছুলের ছোট দুই ছেলে আশিকুর রহমান ও পাপলু হোসেনের সঙ্গে। তবে বাবা-মায়ের বিষয়ে তারা কথা বলতে আগ্রহী নন।
তারা জানান, এখানে কিছু বিষয় আছে। এগুলো নিয়ে কথা বলতে চান না।
সারা দিনের ব্যবসা শেষে শামছুলের লাভ থাকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মতো। সেই টাকা দিয়ে দুই জনের ওষুধ কিনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
কিন্তু হাজার কষ্ট হলেও কারো কাছে হাত পাতবেন না বলে জানান শামছুল। এমনকি নিজের ছেলেদের কাছেও হাত পাততে চান না তিনি।
ছেলেদের সঙ্গে তার এখন আর যোগাযোগ নেই। একসময় চেয়েছিলেন সন্তানরা যেন তার পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় তিনি আর তাদের ‘বিরক্ত’ করেন না।
‘আমার ছেলেরা ভালো থ্যাকুক। সুস্থ থ্যাকুক। ওদেক (ওদের) কোনো দিন অভিশাপ দিইনি। যতই হোক আমার নিজের সন্তান তো’, বলেন শামছুল।