নগরে রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এ লক্ষ্যে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের প্রথম দিন শুক্রবার থেকে নগরের ব্যস্ত কোর্টপয়েন্ট-চৌহাট্টা সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রিকশার সঙ্গে লেগুনা, ভ্যান ও হাতাগাড়ি চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে সিসিক।তবে এতে আপত্তি জানিয়েছে রিকশা চালক ও মালিকদের সংগঠন। এই সড়কে রিকশা চলাচল চালু রাখার দাবিতে আন্দোলনেও নেমেছে তারা। তাদের দাবি, রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত অমূলক। এতে রিকশা চালকরা জীবিকার সংকটে পড়বেন এবং নগরবাসীও দুর্ভোগে পড়বেন।সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার রিকশা চলাচল করে। ছোট নগরে মাত্রাতিরিক্ত এসব রিকশার কারণে সব সময় যানজট লেগে থাকে। ব্যস্ততম কোর্ট পয়েন্ট-চৌহাট্টা সড়কে যানজট থাকে সবচেয়ে বেশি।সিসিকের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি এই সড়ক সম্প্রসারণ করে সৌন্দর্যবর্ধণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই সড়ক ও ফুটপাতের সব হকারদের সরিয়ে অন্যত্র পুণবার্সন করা হয়েছে। কোর্ট পয়েন্ট-চৌহাট্টা সড়কটিকে একটি মডেল সড়কে পরিণত করার কাজ চলছে। যেখানে যাত্রী ও পথচারীরা কোনো দুর্ভোগ পোহাবেন না। পর্যটকরাও মুগ্ধ হবেন। এ কারণে রিকশা-ভ্যানগাড়ি চলালও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।কয়েক দিন ধরেই এই নির্দেশনার কথা জানিয়ে নগরে মাইক দিয়ে প্রচারণা চলাচ্ছে সিসিক। এ ছাড়া এই সড়কের বিভিন্ন মোড়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে এমন নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে।সড়কটিকে সিলেটের একটি মডেল সড়কে পরিণত করার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সিলেটের দীর্ঘদিনের নাগরিক দাবি ফুটপাত হকারমুক্ত করার কাজটি মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি আমরা। নগরবাসীর ফুটপাতে নির্বিঘ্নে হাঁটার অধিকার ফিরিয়ে দিতে পেরেছি।’মেয়র বলেন, ‘সেই ধারাবাহিকতায় নগরীর ব্যস্ততম এই সড়কে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে কোর্ট পয়েন্ট-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কে রিকশা, ভ্যান, হাতাগাড়ি ও লেগুনা চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সড়কটিকে হকারমুক্ত করার পাশাপাশি যানজট মুক্ত রাখার এই উদ্যোগেও নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।’সিসিকের নেয়া উদ্যোগ বাস্তবায়নে পুলিশ সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘তবে এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরও আলোচনা করা দরকার ছিল। সব পক্ষের সঙ্গে বসে পরিকল্পনামাফিক সিদ্ধান্ত নিলে তা বাস্তবায়ন সহজ হয়।’
এদিকে, সিসিকের এমন নির্দেশনা জারির পর থেকেই আন্দোলনে নেমেছে সিলেট জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন। তারা মেয়র ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে কোর্ট পয়েন্ট-চৌহাট্টা সড়কে রিকশা চলাচল অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এই দাবিতে মানববন্ধনও করেছে সংগঠনটি।সিলেট জেলা রিকশাশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইয়াছিন খান বলেন, রিকশার জন্য নগরীতে যানজট সৃষ্টি হয় না। অযথা রিকশার ওপর দোষ চাপিয়ে যানজট সৃষ্টির কথা বলা হচ্ছে। সড়কে উভয় পাশে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য যানজট সৃষ্টি হয়। অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা উচিত।
তিনি বলেন, সিলেট নগরে তেমন কোনো গণপরিবহন নেই। তাই রিকশাই নগরবাসীর ভরসা। প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করলে নগরবাসী দুর্ভোগে পড়বেন। আর রিকশা চালকরাও জীবিকার সংকটে পড়বেন।এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এমন সিদ্ধান্তের ফলে নগরের ব্যস্ততম এই সড়কে চলাচলকারীরা যাতে নতুন করে কোনো ভোগান্তির মধ্যে না পড়েন, সে দিকটি বিবেচনায় রাখতে হবে। এটিকে ‘নো পার্কিং’ সড়কে রূপান্তর না করলে রিকশা বন্ধের সুফল পাওয়া নিয়ে প্রশ্নও তোলেন তিনি।