সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভা নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয় পেল আওয়ামী লীগ। কিন্তু ভোট কেমন হলো, এ নিয়ে এলাকায় চলছে নানা চুলচেরা বিশ্লেষণ।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ২৫টি কেন্দ্রের যে ফল ঘোষণা করেছেন, তাতে আওয়ামী লীগের মনির আক্তার খান তরু লোদীর নৌকায় পড়েছে ২৯ হাজার ৮৭ ভোট। বিএনপির মাহমুদুল হাসান সজল ধানের শীষ নিয়ে পেয়েছেন এক হাজার ৮৬৭ ভোট।
ভোটের এই বিপুল ব্যবধানে প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে আসলে কী হয়েছে। এই এলাকাটি ব্যাপকভাবে আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত, এমনটা নয়। দুই প্রধান দলেরই সেখানে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে, কাজেই ভোটের ফল আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার বিষয়েই ধারণা করা হচ্ছিল।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত টানা ভোট চলে ইভিএমে।
সকাল থেকেই ভোটারের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। তবে বয়স্ক ও নারী ভোটারদের ইভিএমে ভোট দিতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
কেন্দ্রগুলোতে নৌকা ও কাউন্সিলরদের এজেন্ট থাকলেও বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনির আক্তার খান তরু লোদী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ছবি: নিউজবাংলা
কেন্দ্রগুলোতে নৌকার ব্যাচ পরা কর্মী থাকলেও কোথাও ধানের শীষ সমর্থকদের দেখা যায়নি। এমনকি কোনো পোস্টার লাগানো ছিল না।
অভিযোগ রয়েছে, আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার পর নৌকার সমর্থকরা বুথের ভিতর গিয়ে ভোটারদের নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করেন।
দুটি কেন্দ্রে দেখা যায়, ভোটারদের সঙ্গে নৌকার এজেন্টরা বুথে যাচ্ছে। পুলিশ সদস্য ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররাও যাচ্ছেন। ভোটারের সঙ্গে বুথে কেন, এমন প্রশ্নে তারা বলেন, ভোটাররা ইভিএমে ভোট দিতে পারে না বলে তারা দেখিয়ে দিয়েছেন।
সকাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী লোদী কেন্দ্রে গেলেও বিএনপির প্রার্থীকে কোথাও দেখা যায়নি। তিনি বিকেল সোয়া তিনটার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে ভোট দিয়ে আবার ফিরে যান।
বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন প্রত্যাখ্যান
নির্বাচনে অনিয়ম, এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়া ও নেতাকর্মীদের মারপিটসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপির প্রার্থী মাহমুদুল হাসান সজল।
বিকেল সোয়া তিনটার দিকে ইবরাহীম গার্লস হাইস্কুল কেন্দ্রে নিজে ভোট দেয়ার পর তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। দেশের জনগণকে জানাতে চেয়েছিলাম এ সরকারের আমলে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয়। আজকে তা বাস্তবে প্রমাণিত হলো।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে। প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিয়েছে। তারপর আমরা নির্বাচনের মাঠে ছিলাম।
ভোট দিতে ভোটারদের লাইন। ছবি: নিউজবাংলা
‘কিন্তু ভোটগ্রহণ শুরুর পরই প্রতিটি কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের মেরে বের করে দেয়া হয়েছে। কিছু কেন্দ্রে এজেন্ট ঢুকতে দেয়া হয়নি।
‘ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ায় বিএনপির তিন নেতাকে মারপিট করা হয়েছে। ভোটারদের প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে।’
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তরু লোদী বলেছেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে।’
বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ‘নিয়ম হলো সাড়ে সাতটার আগে এজেন্টকে কেন্দ্র যেতে হবে। কিন্তু আটটার পরে হয়ত কোনো এজেন্ট কেন্দ্র গিয়েছিল। এ জন্য ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে কাউকে বের করে দেয়ার ঘটনার বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি।’