বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেতন মওকুফের আবেদন: ছাত্রীকে ‘বিছানায় চাইলেন’ কর্মকর্তা

  •    
  • ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৯:৪৩

করোনার সময়ে পারিবারিক সমস্যার কারণে বরিশালে ইসলামী ব্যাংক নার্সিং ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রী বেতন মওকুফ করতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূর উদ্দিনকে অনুরোধ করেন। ইনস্টিটিউট বন্ধ থাকায় মেয়েটি থাকেন পিরোজপুরে। নূর তাকে বিকেল বেলায় দেখা করার কথা বলে লেখেন, ‘কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়’। মেয়েটি রাগারাগি করলে নূর লেখেন, ‘কলেজ থেকে কিন্তু পাস করে বের হতে পারবে না।’

বরিশালে ইসলামী ব্যাংক নার্সিং ইনস্টিটিউটে ছাত্রীর বেতন মওকুফের আবেদনের পর তাকে একান্তে কাছে পাওয়ার প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

করোনার সময় আর্থিক অসংগতির কারণ দেখিয়ে ওই ছাত্রী আবেদন করেন যেন তার বেতনের টাকা নেয়া না হয়।

মেয়েটির অভিযোগ, তখন ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূর উদ্দিন তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। এ নিয়ে ম্যাসেঞ্জারে কথা চালাচালিও করেন তিনি। মেয়েটিকে চাপ দেয়া হয়। হুমকি দেয়া হয়, কথা না শুনলে বেতন মওকুফ তো দূরের কথা, পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়া হবে।

মেয়েটি ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কাছে ওই চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনশটসহ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এই অভিযোগ করতে গিয়েও তাকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে একবার তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয় ‘মাথায় সমস্যা’ আছে বলে। পরে পরীক্ষার্থীরা আন্দোলনের হুমকি দিলে লিখিত অভিযোগ নেয়া হয়।

তবে কলেজ অধ্যক্ষ এখনও সন্দেহভাজন কর্মকর্তার পক্ষে কথা বলছেন। তিনি বলেছেন, মেয়েটি মিথ্যা বলছে প্রমাণ হলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।

বৃহস্পতিবার ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কাছে ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে এখনও ইসলামী ব্যাংক নার্সিং ইনস্টিটিউট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

অভিযোগকারী মেয়েটি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে সন্দেহভাজন কর্মকর্তার সঙ্গে তার চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনশটও জমা দিয়েছেন। যদিও ওই কর্মকর্তা বলছেন, তার ফেক আইডি খুলে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ আকলিমা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। আমরা পুরো বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখছি।’

আপনারা কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি ছাত্রী মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে থাকেন তাহলে তাকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে।অধ্যক্ষ আকলিমা বলেন, ‘ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তদন্তের জন্য সময় নেয়া হয়েছে। তবে কত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে তা ঠিক হয়নি।’তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূর উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, ‘আমি এমন কোনো প্রস্তাব কাউকে দিইনি। তা ছাড়া ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ছাত্রীদের সঙ্গে অফিসিয়াল কথা বলতে যাব কেন! আমি মনে করি, তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আমাকে ফাঁসানোর জন্য ফেইক আইডি তৈরি করে তার ম্যাসেঞ্জার থেকে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’ নূর উদ্দিন বলেন, ‘স্ক্রিনশট অনেক দিন আগের। তখন ছাত্রী অভিযোগ দিল না, এখন ছাত্রীনিবাসে একটু ঝামেলা হয়েছে, তখনই দিল। এতে প্রমাণিত হয় ঘটনাটি পরিকল্পিত এবং আমি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত না।’পিরোজপুর জেলার বাসিন্দা ওই ছাত্রী করোনা মহামারির সময়ে নার্সিং ইনস্টিটিউটের পুরো বেতন পরিশোধ করতে পারেননি। আর তাকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূর উদ্দিন।

বরিশাল ইসলামী ব্যাংক নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূর উদ্দিন

মেয়েটি নূরের সঙ্গে তার কথা চালাচালির যে স্ক্রিনশট নিউজবাংলাকে দিয়েছেন, তাতে দেখা যায়, তিনি ওই কর্মকর্তাকে বলেন, তার পরিবারে একটু সমস্যা চলছে। তাই এখন টাকা দিতে পারছেন না।

তখন নূর তাকে লেখেন, ফ্যামিলির সমস্যা থাকলে কী হবে, টাকা তো দিতে হবে অবশ্যই। যত তাড়াতাড়ি পার দিয়ে দিও, আগামী দুই/এক দিনের মধ্যে দিয়ে দিও।

মেয়েটি লেখেন, ‘এখন তো কোনোভাবেই দেয়া সম্ভব না। আমার কাকা বাইরে যেতে পারেন না। তাই টাকা দিতে পারেন না।’

তখন নূর লেখেন, ‘এটা তো তোমার বিষয়, কলেজ দেখবে না। কলেজ তো টাকা চায়। আমাদের ফাউন্ডেশনে হিসাব দিতে হয় তো।’

মেয়েটি আবার লেখেন, এখন কোনোভাবে দেয়া সম্ভব নয়। তখন নূর তাকে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

পরে মেয়েটি অনুরোধ করেন, নূর যেন অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। তখন তিনি লেখেন, ‘এত স্টুডেন্ট থাকতে কেন আমি তোমার জন্য সুপারিশ করব? তাহলে তারাও তো বলবে, তখন আমি কী করব?’

মেয়েটি এরপর অনুরোধ করে যেতে থাকলে নূর লেখেন, ‘শোনো, কিছু পেলে কিছু দিতে হয়, আমার একটি শর্ত আছে।’

মেয়েটি শর্ত কী প্রশ্ন রাখলে তখন ইসলামী ব্যাংক নার্সিং ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা লেখেন, ‘তুমি একটু আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবে? তাহলে সামনাসামনি বলতাম। কলেজে না, কলেজের বাইরে।’

কোথায় এবং কবে যেতে হবে জানতে চাইলে নূর লেখেন, বিকাল পাঁচটার দিকে ৩০ গোডাউন এলাকায় আসতে হবে।

মেয়েটি লেখেন, বিকাল পাঁচটায় এলে তার ফিরতে গভীর রাত হয়ে যাবে।

নূর লেখেন, রাতে থাকার ব্যবস্থা তিনি করবেন।

মেয়েটি অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন, ‘স্যার, কী বলেন এগুলো!’

পরে নূর লেখেন, ‘তোমাকে আগেই বলেছিলাম, কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবে।’

মেয়েটি রাগ করে প্রতিক্রিয়া জানালে তখন নূর লেখেন, এই মেয়ে ভদ্রভাবে কথা বলো। তুমি এগুলো কী বলছ? কলেজ থেকে কিন্তু পাস করে বের হতে পারবে না।

অভিযোগকারী ছাত্রী নিউজবাংলাকে জানান, ঘটনা ঘটেছে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। প্রথমে তিনি কাউকে না বললেও পরে কলেজে গিয়ে অভিযোগ করেন। কিন্তু শুরুতে তার অভিযোগ নিতে চায়নি কলেজ।

মেয়েটি বলেন, “মানসম্মানের ভয়ে প্রথমে কিছু বলিনি। তবে চলতি মাসের ১৪ ডিসেম্বর লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে তা নেয়নি কলেজ প্রশাসন। বরং আমার ‘মানসিক সমস্যা আছে’ বলে বিভিন্ন জনের কাছে অপপ্রচার চালান নূর উদ্দিন। তবে সহপাঠীরা আন্দোলনের হুমকি দিলে কলেজ থেকে অভিযোগ দিতে বলা হয়।”

এ বিভাগের আরো খবর