বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাদকের হোম ডেলিভারি

  •    
  • ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৫:৫৫

আজমিরীগঞ্জের কয়েকটি চক্র শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেল ও বর্ষায় নৌকায় চড়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মদের ডেলিভারি দিয়ে থাকে। গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিলেরও হোম ডেলিভারি হয় সেখানে।

হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চলের প্রত্যন্ত উপজেলা আজমিরীগঞ্জ। দেশি মদ সেখানকার মানুষের নিত্যদিনের পানীয়।

স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে আছে এসব মদের সরবরাহ। আবার কয়েকটি চক্র শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেলে ও বর্ষায় নৌকায় চড়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মদের ডেলিভারি দিয়ে থাকে। গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিলেরও হোম ডেলিভারি হয় সেখানে।

এমন চোলাই মদ সরবরাহের সময় গত শুক্রবার সৈকত নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। তার কাছ থেকে প্রায় ৩০০ লিটার চোলাই মদ জব্দ করা হয়।

আজমিরীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হানিফ নিউজবাংলাকে জানান, সৈকত বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর এলাকার বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, লাখাই উপজেলা থেকে নৌকায় মদের চালান নিয়ে আজমিরীগঞ্জের পাহারপুর বাজারে যাচ্ছিলেন। এ জন্য ৫ হাজার টাকায় সাজু মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার চুক্তি হয়।

অভিযানে নৌকায় মেলে চোলাই মদ। ছবি: নিউজবাংলা

আবু হানিফ জানান, এই সাজু মিয়া মদ হোম ডেলিভারি চক্রের অন্যতম সক্রিয় সদস্য। চুরি ও ডাকাতিসহ কয়েকটি মামলার আসামি সাজু অনেকদিন ধরে পলাতক।

উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ফোন দিলেই নৌকা বোঝাই করে মদ নিয়ে আসে ওরা। অনেক সময় দেশি মদের সঙ্গে বিদেশি মদ ও ইয়াবাও আনা হয়। এক-দুই দিন না, অন্তত ১০ বছর ধরে এভাবে মদ বিক্রি চলছে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় এসব চক্রের সঙ্গে জড়িত সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলার কিছু প্রভাবশালী চক্র। বর্ষায় কুশিয়ারা নদীতে চলাচল করা লঞ্চের মাধ্যমেও মাদক সরবরাহ হয়। কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মারকুলি বাজার পর্যন্ত মাদক পাচারের নিরাপদ রুট এই কুশিয়ারা নদী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যক্তি বলেন, এখানে মাদক নিয়ে আসা লোকজন খুব প্রভাবশালী। দিনের আলোয় প্রকাশ্যেই মাদক নিয়ে নৌকা পারে ভিড়ায় তারা। কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলে না।

মদের সন্ধানে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। ছবি: নিউজবাংলা

কোথায় তৈরি হয় এসব মদ?

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার শিবপাশা, শৈলরি, কাকাইলছেও, বদলপুর, পাহাড়পুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে দেশি মদ তৈরি করা হয়। বাড়ির নারীরা এসব তৈরি করেন; সরবরাহের কাজ করেন পুরুষরা।

উপজেলার পশ্চিমবাগ গ্রামে গত ২২ ডিসেম্বর অভিযান চালিয়ে মদ তৈরির একটি কারখানা গুঁড়িয়ে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ মদ ও মদ তৈরির সরঞ্জাম। এ কাজে জড়িত থাকায় দুই নারীকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মতিউর রহমান খান।

তিনি জানান, প্রায়ই এ ধরনের অভিযান চালানো হয়। তাতেও থামছে না এই কারবার।

বরং প্রশাসনকে ফাঁকি দিতে মদের বোতল প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে মাটির নিচে পুঁতে রাখেন অনেকে। ২২ তারিখের ওই অভিযানে আরেকটি বাড়ির গোয়াল ঘরের মেঝে ও উঠানের মাটি খুঁড়ে কয়েক ড্রাম মদ পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মাটিতে পুঁতে রাখা মদ ভর্তি ড্রাম। ছবি: নিউজবাংলা

কী করছে প্রশাসন?

বদলপুর বাজারের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, মদ ও মাদকের অবাধ বিক্রির বিষয়টি পুলিশের জানা থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না। আবার দূরের রাস্তা হওয়ায় অভিযানের জন্য পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই মাদক কারবারিরা পালিয়ে যায়।

বদলপুর এলাকায় একটি পুলিশফাঁড়ি হলে মাদক বেচা-কেনা কমে যাবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।

মদ উৎপাদনের বিষয়ে তথ্য আছে জানিয়ে ইউএনও মতিউর রহমান খান বলেন, ‘উপজেলার শিবপাশা, বদলপুর, পাহাড়পুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম আমাদের তালিকায় আছে। অভিযান চালানো হচ্ছে এবং আগামীতেও অভিযান চালানো হবে।’

স্থানীয় এই মাদকের কারবার বন্ধে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে বলে জানান ইউএনও। কেউ যদি এই কারবার ছেড়ে দেয়, তাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহযোগিতা করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

তবে আজমিরীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হানিফ জানালেন ভিন্ন কথা।

তিনি বলেন, এই উপজেলায় মদ উৎপাদন হয় না। বাইরে থেকে এখানে সরবরাহ করা হয়।

মাদকের বিরুদ্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ায় মাদকদ্রব্য আসার পাইপলাইন বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করেন জেলার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এমএ মজিদ।

এ বিভাগের আরো খবর