পঞ্চগড় পৌরসভায় প্রার্থীরা শনিবার শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। সোমবার অনুষ্ঠেয় ভোটে মেয়র পদে নৌকার সঙ্গে ধানের শীষের লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) এক জন করে মোট তিন জন প্রার্থী রয়েছেন। কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৫৪ জন।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী জাকিয়া খাতুন। তিনি এর আগের পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন। জাকিয়া পেশায় স্কুলশিক্ষক। তিনি জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন পর্যন্ত এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েক জন কর্মী নিউজবাংলাকে বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে মেয়র পদে মনোনয়ন নিয়ে কয়েকটি ধারায় দ্বন্দ্ব চলছে। তা অব্যাহত থাকলে বিএনপির প্রার্থী আ জয়ী হবেন।
তবে জাকিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছি, এবারের নির্বাচনে জনগণ পরির্বতন চায়, কারণ দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মেয়র নির্বাচিত হয়ে আসছেন, কখনো কোনো কাজ করেননি। এবার জনগণ বুঝতে পেরেছে উন্নয়নের স্বার্থে পরিবর্তন প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব মতভেদ ভুলে গিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছি। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মী এক হয়ে আমার জন্য কাজ করছেন। এবার ইনশাল্লাহ আমাকে নির্বাচিত করবেন।’
‘আমি নির্বাচিত হতে পারলে পৌর এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেন কালর্ভাট ডাস্টবিনের উন্নয়ন এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাই। পাশাপাশি যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই। সব মিলিয়ে পঞ্চগড়কে একটি ডিজিটাল শহর করে তিলোত্তমা নগরে পরিণত করতে চাই।’ বলেন তিনি।
বিএনপির প্রার্থী তৌহিদুল ইসলাম। তিনি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক। তিনি ২৫ বছর ধরে এই পৌরসভায় মেয়র হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। পরে এই পৌরসভায় কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে পাঁচবার মেয়র নির্বাচিত হন। তবে বিএনপিতেও দ্বন্দ্ব রয়েছে।
সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকারের বিরাট সমর্থকগোষ্ঠীর সঙ্গে তৌহিদুল ইসলামের দূরত্ব আছে। যদিও সবাই একজোট হয়ে তৌহিদুল ইসলামকে সমর্থন জানিয়েছেন, অনেকে আশঙ্কা করছেন এই দূরত্বকে কাজে লাগাতে পারে নৌকা।
তবে তৌহিদুল ইসলাম বলছেন, ‘কোনো বিভাজন নেই। আমরা সবাই একসাথে কাজ করছি। আমি দীর্ঘদিন মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি। এই পৌরসভার প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে আমার নাম লেখা আছে। তাই মানুষ আমাকেই ভোট দেবে।’
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, ‘বিগত সময়ে পৌরসভার নিজস্ব আয় এবং যে পরিমাণ উন্নয়ন বাজেট এসেছে, তা থেকে দৃশ্যত তেমন কোনো পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি। সামনে যে নির্বাচন, এতে কাকে মেয়র নির্বাচিত করলে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিরসন হবে আমরা তাকেই নির্বাচিত করব।’
এদিকে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) থেকে নির্বাচন করছেন শাহরিয়ার বিপ্লব। এই পৌরসভায় জাগপার বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী ছিল। জাগপার প্রতিষ্ঠাতা সফিউল আলম প্রধানের বাড়ি এখানে হওয়ায় তুমুল জনপ্রিয় ছিল দলটি। তবে বর্তমানে খুব বেশি কার্যক্রম নেই।
এখানে মোট ভোটার ৩৫ হাজার ৯ জন। পুরুষ ১৭ হাজার ১৫১ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ১৭ হাজার ৮৫৮ জন। মোট ১৫টি কেন্দ্রের ৯৭টি কক্ষে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলমগীর জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। ইভিএম যন্ত্রও পৌঁছে গেছে। ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।