চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনের বাকি আর দুই দিন। ব্যানার আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো পৌর এলাকা। নির্বাচন সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে দিন-রাত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দিচ্ছেন বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি; যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
শনিবার মধ্যরাতে শেষ হবে সব ধরনের প্রচার। নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীকে আচরণবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেমে (ইভিএম) চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় ভোট নেয়া হবে। ২৮ ডিসেম্বর সোমবার সকাল ৮টায় শুরু হবে ভোট, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
পৌরসভায় ভোটার ৬৭ হাজার ৮০৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩২ হাজার ৮১৮ জন ও নারী ৩৪ হাজার ৯৯০ জন। পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা ২ হাজার ১৭২ জন বেশি। নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৩টি ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ১৯৭টি।
নির্বাচনে মেয়র পদে সাত জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, বিএনপির ধানের শীষে সিরাজুল ইসলাম মনি, হাতপাখায় ইসলামী আন্দোলনের তুষার ইমরান, মোবাইল ফোন প্রতীকে বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুল হক মালিক মজু, নারিকেল গাছে মনিবুল হাসান পলাশ, জগ প্রতীকে সৈয়দ ফারুক উদ্দিন আহম্মেদ এবং কম্পিউটার প্রতীকে তানভীর আহমেদ মাসরিকী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৩ নারী প্রার্থী ও সাধারণ কাউন্সিলর নয়টিতে ৬৪ প্রার্থী লড়ছেন।
গত বুধবার সকালে ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বিল্লাল হোসেন বেল্টু মারা যাওয়ায় ওই ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন স্থগিত করা হবে বলে জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তারেক আহমেদ।
আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মালিক।
তিনি জানান, এ নিয়ে টানা পাঁচবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে এবার মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। তাই পাড়ায় পাড়ায় ছুটতে হচ্ছে। পৌর এলাকার মানুষের জন্য তিনি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তার প্রত্যাশা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম মনি।
তিনি জানান, তার বাবা ১৯৬৫ সাল থেকে টানা ২১ বছর জনপ্রতিনিধি ছিলেন। ২০০২ সাল থেকে তিনি ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার মেয়র পদেও তাকে পৌরসভার মানুষজন বেছে নেবেন বলে প্রত্যাশা তার।
ইভিএমে ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘প্রথমবার ভোট হচ্ছে ইভিএমে। এ বিষয়ে ভোটারদের তেমন ধারণা নেই। তাই প্রচারণার সময় ইভিএম বিষয়েও ভোটারদের ধারণা দিতে হচ্ছে।’
মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হক মালিক মজুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুল হক বলেন, ‘জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দল আমাকে বহিষ্কার করেছে। তবুও দলীয় নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। তারা আমাকে নির্বাচিত করবেন।’
অন্য দিকে ১৩ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৬৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তারেক আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন গ্রহণযোগ করতে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনের মাঠে থাকবেন। পুলিশের একাধিক টিমের পাশাপাশি মাঠে কাজ করবে র্যাব ও আনসার বাহিনী।’
এ ছাড়া দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।