অঙ্গীকার ভঙ্গ করে সিলেট বিভাগের অন্য তিন জেলার মতো গণপরিবহন বন্ধ রেখেছেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন মালিক সমিতিও। জরুরি কাজে যাদের গন্তব্যে যেতেই হচ্ছে, তারা পড়েছেন ব্যাপক দুর্ভোগে।
কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের দাবিতে ১৭ ডিসেম্বর সিলেটে বিভাগে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু একদিন পরই ওই ধর্মঘট প্রত্যাখান করার কথা জানায় সুনামগঞ্জ পরিবহন মালিক সমিতি।
সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুকিত মকুলের পাঠানো বার্তায় বলা হয় ‘বিজয়ের মাসে সুনামগঞ্জে জেলা পরিবহন মালিক সমিতি কোনো পরিবহন ধর্মঘটকে সমর্থন করে না। জেলায় সব গণপরিবহন চলাচল করবে।’কিন্তু কথা রাখেন নি সুনামগঞ্জের পরিবহন ব্যবসায়ীরা। কৌশল পাল্টে বিআরটিসি বাস ছাড়ার ইস্যুকে সামনে এনে ধর্মঘট পালন করছেন তারা। এর সঙ্গে আছে কোয়ারি থেকে পাথর তোলার দাবিও। কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
বুধবার সুনামগঞ্জ থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন সিএনজি ও লেগুনা চালকরা। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ধান কিনতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছিলেন আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘আমি ধান কিনার লাগি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে এসেছিলাম, এখন দেখি গাড়ি চলে না, আমি তো জানিনা ধর্মঘট চলতেছে যে। এখন জানি না বাড়ি ক্যামনে যাইতাম।’সুনামগঞ্জের রঙ্গাচর এলাকার বাসিন্দা পেয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি বাড়িত যাইতাম, কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে আইয়া দেখি সিলেট কোনো বাস যার না। এখন বাধ্য হইয়া ২০০ টাকা দিয়া সিলেট যাইরাম।’অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে সিএনজি চালক তারেক আহমদ বলেন, ‘বাস চলছে না বলে আমরা জীবনের রিক্স নিয়া বের হইছে। তাই সামান্য ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছি।’
পরিবহন ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের সিদ্ধান্তের কারণে বিপাকে পড়েছেন এ খাতের শ্রমিকরাও। কয়েক দিন আয় রোজগার না থাকায় দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করা শ্রমিকরা আছেন বেশি দুশ্চিন্তায়। বাস চালক খুরশেদ আলম বলেন, ‘সিলেটের ট্রাক ড্রাইভাররা কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন করতে না পারায় মালিকদের কথায় আমরা ধর্মঘট পালন কররাম। মালিক যদি এখনই কয় গাড়ি ছাড়তাম। আমরা গাড়ি রাস্তায় চালাতে আপত্তি নাই।’
অঙ্গীকার করেও কেন ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুকিত মকুল বলেন, ‘বিজয়ের মাসে আমরা ধর্মঘট সমর্থন করিনি। কিন্তু আমাদের নীরবতাকে কাজে লাগিয়ে বিআরটিসি বাস নামানো হয়েছে। এ কারণে আমরাও বাস বন্ধ রেখেছি।’
সুনামগঞ্জ বাস, মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া বলেন, ‘সিলেটের ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন করতে না পারায় তাদের এ দাবিতে সমর্থন জানিয়ে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি।
‘হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কে নতুন বিআরটিসি বাস ছাড়ার বিষয়টি আমাদের জানানো হলে আমরা কোনো ধর্মঘট সমর্থন করতাম না।’