পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক আগুনে গলিয়ে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কাটখইর গ্রামের মো. ফজলুর রহমান। এ কাজের জন্য তিনি এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
ফজলুর রহমানের কাজ দেখার জন্য প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার লোকজন।
ফজলুরের বাড়ির সামনেই একটি বদ্ধ তেলের ড্রামের সঙ্গে পাইপের মাধ্যমে তিনটি সিলিন্ডারে সংযোগ দেয়া হয়েছে। সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে তিনটি হিট মিটার। ভেতরে প্লাস্টিক ও পলিথিন ভরে ড্রামের মুখ বন্ধ করে নিচে আগুন জ্বালিয়ে তা গলানো হচ্ছে।
প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মিনিট ধরে উচ্চ তাপ প্রয়োগের পর দেখা যায়, প্লাস্টিক ও পলিথিন পুরোপুরি গলে পাইপের মাধ্যমে বাষ্পীভূত হয়ে বিন্দু বিন্দু আকারে সিলিন্ডারে জমছে ডিজেল-পেট্রোল-অকটেন। প্রতিটি সিলিন্ডারের নিচের অংশে বিবকর্ক যুক্ত করা আছে যাতে তেল ভর্তি হয়ে গেলে প্রয়োজনে সেখান দিয়েও বোতলে তেল সংরক্ষণ করা যায়। প্লাস্টিক ও পলিথিন গলানোর কারণে যে পানি বের হয় তা ফেলার জন্য অন্য একটি পাইপ যুক্ত করা হয়েছে। সেখান দিয়ে পাশের ডোবাতে পানি ফেলা হয়।
ফজলুর রহমান পরিত্যক্ত প্লাস্টিক-পলিথিন থেকে উৎপাদিত জ্বালানি তেল নিজস্ব মোটসাইকেলে ব্যবহার করার পাশাপাশি গ্রামবাসী, স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদেরও দিচ্ছেন ব্যবহারের জন্য।
ফজলুর রহমানের সঙ্কগে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কুজাগাড়ী হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৯২সালে হেফজ (হাফেজ ) পাস করার পর আর বেশি দূর পড়াশোনা করা হয়নি। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। সংসারের হাল ধরতে ড্রাইভিং ট্রেনিং নিয়ে ঢাকায় নিজের মাইক্রোবাস চালাতাম। এরপর ২০১৭ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর মাইক্রোবাসটি বিক্রি করে দিয়ে গ্রামে চলে আসি। এরপর কৃষিকাজ শুরু করি। ২০১৯ সালের শেষের দিকে নারায়ণগঞ্জে একটি ব্যক্তিগত কাজের জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে এক জনকে পলিথিন ও প্লাস্টিক পুড়িয়ে জ্বালানি তৈরি করতে দেখে মনের ভিতর আবার সেই ছোটবেলার কৌতূহল ভর করল। গত কয়েক মাস ধরে অনেক কষ্ট করে ১ লাখ ৭০ হাজার জোগাড় করি। তা দিয়ে কিছু যন্ত্রাংশ কিনে নিজেই জ্বালানি তেল উৎপাদন শুরু করি। সরকারের সহযোগিতা পেলে আরও অনেক জ্বালানি তেল উৎপাদন করতে পারতাম।’
ফজলুর রহমান জানান, উৎপাদিত জ্বালানি তেল দুটি পদ্ধতিতে পরিশোধন করা হয়। এক ছাকন পদ্ধতি এবং দুই থিতানো পদ্ধতি। থিতানো পদ্ধতিতে এক কেজি পলিথিনে ৫০০ গ্রাম ও প্লাস্টিক থেকে ৬০০/৭০০ গ্রাম জ্বালানি তেল উৎপাদিত হয়। এতে খরচ হয় মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা ।
হাসাইগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘ফজলুর রহমানের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমরা তার এ কাজকে আরও বেগবান করতে পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করব।’
জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমি ফজলুর রহমানের উদ্ভাবনের বিষয়ে খোঁজ নেব। যদি তার কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তবে তাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে।’