বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বাধীনতা যুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরের বীরত্ব

  •    
  • ২০ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৩:৫৬

লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের হাসর উদ্দিন দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের হেড কোয়ার্টার। এ কারণে বুড়িমারী প্রায় সব সময় শত্রুমুক্ত ছিল বলে জানান বেঁচে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তৎকালীন রেল ডিভিশন লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলে একটি বড় অংশ নিয়ে গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর ৬ নম্বর।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের হাসর উদ্দিন দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ছিল এ সেক্টরের হেড কোয়ার্টার। এ কারণে বুড়িমারী মুক্তিযুদ্ধের অধিকাংশ সময় শত্রুমুক্ত ছিল বলে জানান বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

সেক্টরটি বিস্তৃত ছিল দিনাজপুরের অংশ বিশেষ (ঠাকুরগাঁও) এবং সমগ্র রংপুর (ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরবর্তী অঞ্চল ব্যতীত) নিয়ে। পীরগঞ্জ-বীরগঞ্জ লাইনের উত্তরাংশ ও রংপুর জেলার পীরগঞ্জ-গাইবান্ধার পলাশবাড়ী লাইনের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলা পর্যন্ত এর আওতায় ছিল।

সেক্টর কমান্ডার ছিলেন এয়ার ভাইস-মার্শাল মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার (বীর উত্তম)।

পাঁচ সাব-সেক্টরের মধ্যে ভজনপুর এলাকার দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন নজরুল, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সদরুদ্দিন ও ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার, পাটগ্রামে ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান, সাহেবগঞ্জ এলাকায় ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দীন, মোগলহাট এলাকায় ক্যাপ্টেন দেলোয়ার ও চাউলাহাটি এলাকার দায়িত্বে ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ইকবাল।

এই সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার। এদের মধ্যে দুই হাজার নিয়মিত সেনা এবং ৯ হাজার ছিল গণবাহিনীর সদস্য।

জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেরিলা যুদ্ধ করেছিলাম। ভারতীয় সেনাদের পাশাপাশি মুক্তিফৌজ, সেনাবাহিনী, মুজিববাহিনী ও ইপিআর সম্মিলিতভাবে এ অঞ্চলে আমরা যুদ্ধ করেছি।’

‘যুদ্ধে আমরা অনেক সাথি ভাইকে হারিয়েছি। অনেক মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছে। পুড়িয়ে ছাঁই করে দেয়া হয়েছে বাড়িঘর। কিন্তু আমাদের মনোবল অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। আমরা সুসংগঠিতভাবে একটি শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে পেরেছিলাম।’

আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলা নেতা ড. এসএম শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, ‘কর্নেল বাশার ছিলেন এ সেক্টরের অধিনায়ক। পরবর্তীতে তিনি বিমান বাহিনীর প্রধান হন। আমরা মূলত তার নেতৃত্বেই যুদ্ধ করেছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয়ে সৈয়দপুরের দিকে পালানোর সময় পাকিস্তানি সেনারা তিস্তা ব্রিজের একটি অংশ ভেঙে দেয়। এতে এ অঞ্চল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট মুক্ত হয়।’

লালমনিরহার সদর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমি ভারতের মুজিব ক্যাম্পে ট্রেনিং নিই। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ছেলে শহিদ শেখ কামাল আমাদেরকে এক মাসের ট্রেনিংয়ের পর যার যার এলাকায় পাঠিয়ে দেন।’

ভারত থেকে ফিরে তিনি ভেলাবাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্পে যোগ দেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘ওই ক্যাম্পে আমরা ৩০ জন অবস্থান করছিলাম। সেখান থেকে যুদ্ধ করতে করতে ৪ ডিসেম্বর লালমনিরহাট ঘেরাও করেন। ৫ ডিসেম্বর লালমনিরহাট স্টেশন থেকে একটি ট্রেনে হানাদাররা চলে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লালমনিরহাট থেকে রংপুরে যাই। সেখানে ১৫ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানের সৈন্যরা ফুলের মালা দিয়ে আমাদের কাছে আত্মসমপর্ণ করে। ১৬ ডিসেম্বর রংপুর মুক্ত করে হাতিয়ার (অস্ত্র) জমা দিয়ে বাড়িতে চলে আসি।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিম মিয়া জানান, আদিতমারী থেকে তারা ১২ থেকে ১৩ জন মুক্তিযুদ্ধে যান। আদিতমারী থেকে স্বর্ণামতি ব্রিজ পর্যন্ত রেললাইন তুলে তারা ভারতে যান। দার্জিলিংয়ে ২১ দিনের ট্রেনিং শেষে অস্ত্র নিয়ে তারা বুড়িমারীতে চলে আসেন।

তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন বড়খাতায় একটি ক্যাম্পে আমরা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তিন ঘণ্টা যুদ্ধ করি। সেখানে দুলাল নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। যুদ্ধে হানাদার বাহিনীকে হারিয়ে সেখান থেকে ১৮ জন বাঙালি মেয়েকে উদ্ধার করি।’

এ সেক্টরের আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘লালমনিরহাটে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। এগুলো সংস্কার করে একটি পূর্ণাঙ্গ বধ্যভূমির তালিকা প্রকাশ করতে হবে।’

দেশের সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি আলাদা দিবস ঘোষণার দাবিও জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর