১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর। চার দিন আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত বিজয়।
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারে বিভিন্ন জায়গায় হানাদার বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ আর স্থলমাইন এনে জড়ো করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। দুটি ট্রাকে করে নিয়ে আসা অস্ত্র রাখা হচ্ছে একটি ঘরে।
এক জন মুক্তিযোদ্ধা একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল ওই অস্ত্রের গুদামে ছুড়ে মারলে বিস্ফোরণ হয় একটি মাইন। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় আশপাশে থাকা ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধার দেহ। তাদের মধ্যে ২৪ জনকে শনাক্ত করা যায়। বাকি সাত জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ওখানেই সমাহিত করা হয় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। মৌলভীবাজারে দিনটিকে স্থানীয় শহিদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
শহিদদের নাম ফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা পরিষদ, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। ছবি: নিউজবাংলা
সাবেক জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, সবাই সেদিন অপেক্ষা করছিলেন কখন সব অস্ত্র জমা হবে আর বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু একটি আনন্দের দিন কীভাবে শোকের হয়ে গেল।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর জেলা পরিষদের উদ্যোগে ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাধিস্থলটি সংস্কার করা হয়েছে। এতে খুশি বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা।
কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, জায়গাটি পরিণত হয়েছে বখাটেদের আড্ডাস্থলে। রাতে এমনকি দিনেও এখানে নেশাগ্রস্তদের মাদক সেবন করতে দেখা যায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন আফসোস করে বলেন, সমাধিস্থলে কোনো সাইনবোর্ডে সেদিনের ঘটনা লেখা না থাকায় তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস জানে না। একদিন তাদের কাছে এই ঘটনা বলার মতো কেউ বেঁচেও থাকবে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র আইনজীবী মুজিবুর রহমান মুজিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে যেন নেশাখোর ও যৌনকর্মীরা কোনো অপকর্ম করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের খেয়াল রাখা উচিত। দেয়ালগুলো আরও উঁচু করে ভালোভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।’