সড়কের মধ্যে অস্থায়ী বেদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী। তার চোখ বাঁধা, একহাতে দাঁড়িপাল্লা ও অপর হাতে তলোয়ার। রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে সেই নারীকে টেনে নামাতে চেষ্টা করছেন কয়েকজন যুবক।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সিলেট নগরের চাঁদনীঘাট এলাকার মঞ্চায়িত করা এ দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় ২০১৭ সালের একটি ঘটনা। ওই বছরের ২৬ মে মধ্যরাতে ঠিক এভাবেই একটি নারী ভাস্কর্যকে টেঁনেহিচড়ে নামানো হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে। 'ন্যায় বিচারের প্রতীক' হিসেবে নির্মিত সেই ভাস্কর্যটি সরিয়ে নিতে হয় ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীর আপত্তির মুখে।
তিন বছর পর আবার ভাস্কর্য নিয়ে দেখা দিয়েছে উত্তাপ। রাজধানীতে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল। ক্ষমতাসীন দল এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে এই বিরোধিতার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ নিয়ে বাদানুবাদের মধ্যে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
এমন পরিস্থিতিতে নাটকের মাধ্যমে ভাস্কর্য বিরোধিতার প্রতিবাদ জানিয়েছে সিলেটের নাট্য সংগঠন 'নগরনাট'। বুধবার দুপুরে সুরমা নদীর তীরের চাঁদনীঘাটে তারা মঞ্চস্থ করে ইন্টারেক্টিভ স্ট্রিট ড্রামা 'স্লিপিং স্কোয়াড'। সেই নাটকেই দেখা যায় 'ন্যায় বিচারের প্রতীক' ভাস্কর্যকে টেনে নামানোর দৃশ্য।কেবল ভাস্কর্য বিরোধিতার প্রতিবাদ নয়, এই নাটকের মাধ্যমে নারী নিপীড়ন, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, দুর্নীতি, বাক স্বাধীনতা দমনের চেষ্টাসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়।
নাটকে অংশ নেওয়া অভিনেতারা উদোম গায়ে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার সংবাদ শিরোনাম বুকে-পিঠে ও হাতে-পায়ে লিখে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সবাইকে সরব হওয়ার আহ্বান জানান।
চাঁদনীঘাটে আলী আমজদের ঘড়িঘরের পাশে এই নাটক দেখতে জড়ো হন কয়েক শ' দর্শক।
এদের মধ্যে ছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব মু. আনোয়ার হোসেন রনি। তিনি বলেন, নাটক তো কেবল বিনোদন নয়, প্রতিবাদেরও হাতিয়ার। আজকের এই নাটক তা আবারও প্রমাণ করল।
'স্লিপিং স্কোয়াড'-এর রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন অরূপ বাউল। তিনি বলেন, ধর্ষণ-নারীনিপীড়ন কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। পুলিশ হেফাজতে মানুষ মারা যাচ্ছে। দুর্নীতি থামছে না। আমাদের শেকড়ে আঘাত করছে মৌলবাদীরা। কিন্তু সব কিছুই যেন আমাদের গা সওয়া হয়ে উঠেছে। আমরা যেন জেগে জেগেই ঘুমাচ্ছি। এই ঘুমিয়ে থাকা জনগণকে জেগে ওঠার আহ্বান জানাতেই আমাদের নাটক 'স্লিপিং স্কোয়াড'।'
নগরনাটের সভাপতি উজ্জ্বল চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা একটি সমতার ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যেখানে সাম্য, সম্প্রীতি আর ন্যায় বিচার থাকবে। কোনো বিশেষ জাতি, ধর্ম বা গোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়নি। এই রাষ্ট্র সকল বাঙালির এমনকি দেশে বসবাসরত অবাঙালিদেরও। চলমান ঘটনাগুলো মুক্তিযুদ্ধের এই মৌল চেনতাকেই আঘাত করছে। এসবের প্রতিবাদেই আমাদের এই নাটক।’